
চট্টগ্রামে চলতি বছর চিকুনগুনিয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। গত ২৪ জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত এক মাসে ডেঙ্গু রোগীর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৭১ জন ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত এক হাজার ৭৭৪ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য পর্যালোচনা করে এই উপাত্ত পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে গত তিন বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় ২৩ হাজার ৮৫৫ জন। মৃত্যু ১৯৩ জনের। এ রোগে চলতি বছর গত আট মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। গত বছর চিকুনগুনিয়ায় কেউ আক্রান্ত হয়নি।
করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বশেষ গত এক মাসে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে তিনজন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৭১ জন ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী এক হাজার ৭৭৪ জন। এ সময় চিকুনগুনিয়ায় কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে ছয়জন ও করোনায় একজন মারা যায়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ৬৬৯ জন, ডেঙ্গু রোগী ৭৫৯ জন (্মৃত্যু ৯ জনের) এবং করোনা সংক্রমিত রোগী ছিল ২২৪ জন (মৃত্যু ৯ জনের)। চলতি মাসের গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে চিকুনগুনিয়ার রোগী দুই হাজার ৪৪৩ জন, ডেঙ্গু রোগী এক হাজার ৩৩০ জন ও করোনায় সংক্রমিত ২২৭ জন।
গত জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত সাত মাস ২৫ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ২২৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১০ জন (পুরুষ ও নারী পাঁচজন করে); ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের (শিশু দুই, পুরুষ ১০ ও নারী তিনজন); চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত দুই হাজার ৫১৬ জন।
চট্টগ্রামে চলতি বছর চারজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস তিনটিই এডিস মশাবাহিত রোগ।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু এখনো গত বছরের তুলনায় কম। গত বছর আমরা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাইনি। এবার এখন পর্যন্ত আক্রান্ত আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত আরো বাড়তে পারে। এ রোগে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বেশি। জ্বর ও জ্বর-পরবর্তী বেশ কিছুদিন শরীরে ব্যথা থাকছে। বৃষ্টি কমলে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব কমবে। বাসাবাড়িতে দিন ও রাতে মশারি টানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে আমরা জনসচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ভর্তি লাগছে না। জ্বর নিয়ে হাসপাতালের আউটডোর এবং চেম্বারে যেসব রোগী আসছে, তাদের বেশির ভাগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। জ্বরের সঙ্গে শরীরে পচণ্ড ব্যথা নিয়ে আসছে এসব রোগী। দেখা যাচ্ছে, চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের কেউ কেউ জ্বর-পরবর্তী এক মাস থেকে ছয় মাস কষ্ট পাচ্ছেন।
চমেক মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. সৌমেন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন চেম্বারে জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই চিকুনগুনিয়া রোগী। নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা বিধান কান্তি দত্ত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ডেঙ্গু পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও জ্বর এবং শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে দেখালে চিকিৎসক সব শুনে বলেন, আমার চিকুনগুনিয়া হয়েছে। দুদিন পর জ্বর কমলেও প্রায় দেড় মাস ধরে আমি ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি। শরীরে দুর্বলতা আছে। চিকিৎসক বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।’