Image description
 

বাংলাদেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বিটিআরসিকে নির্দেশনা প্রদান করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ হতে প্রেরিত সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ, পদোন্নতি প্রদান, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনরায় নিয়োগ, বয়স সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এমন সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

 

বিগত সরকারের আমলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২০১৬-১৭ ও ২০১৯-২০ সালে কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়াই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে একাধিক তদন্তে সুস্পষ্টভাবে অবৈধভাবে নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণিত হলেও তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশনায় যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তপূর্বক শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের সাইনিং পাওয়ার রহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই এর ৩০ তারিখে নির্দেশনা প্রদান করা হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি।

 

শিক্ষা ও বয়সজনিত কারণে যে সকল কর্মকর্তাদের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত-

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রেরিত পত্রে ২৯ জন কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণিত হিসেবে উঠে এসেছে। বিটিআরসির এক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বিটিআরসি'র প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন এবং পরবর্তীতে কমিশন গঠনের সময়ে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন মেজর জেনারেল জিয়া আহমেদের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের তদবিরের মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোন রকম পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে প্রেরিত তালিকা মোতাবেক মোট ২৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে উপ-পরিচালক পদে কর্মরত খালেদ ফয়সাল বয়সজনিত কারণে অযোগ্য, উপ-পরিচালক নাহিদুল হাসান এবং শারমিন সুলতানা বয়স ও শিক্ষাজনিত কারণে অযোগ্য, এবং উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান, মোসা. তৌহিদুর নাহার, নাফিসা মল্লিক, সামিরা তাবাসসুম, মেহফুজ বিন খালেদ শিক্ষাজনিত কারণে অযোগ্য।

 

এছাড়া সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত মশিউর রহমান শিক্ষাজনিত কারণে, সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত কাউছার আহমেদ শিক্ষাজনিত কারণে ও শামছুল আলম শিক্ষাজনিত কারণে নিয়োগের অযোগ্য।

 

বয়স প্রমার্জন করে বিধিবহির্ভূতভাবে ২১ জন ড্রাইভার ও কর্মচারী নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত-

দশ মাস থেকে শুরু করে ষোল বছর পর্যন্ত বয়স প্রমার্জন করে নিয়োগ প্রদানের নজির বিহীন দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। বিভিন্ন সময়ে বয়স প্রমার্জন করে বিধিবহির্ভূতভাবে এগারো জন ড্রাইভারকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বয়স শিথিল করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড্রাইভার মো. মুক্তার হোসেনকে। বয়স প্রমার্জন করে বিধিবহির্ভূতভাবে সাত জন এমএলএসএস নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যেখানে সর্বোচ্চ নয় বছর বয়স শিথিল করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমএলএসএস জলিল হাওলাদারকে। অফিস সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনজন যেখানে সর্বোচ্চ ষোল বছর বয়স শিথিল করে শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 

তিন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত-

বিটিআরসিতে বর্তমানে পরিচালক পদে কর্মরত তিনজন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূভাবে পদোন্নতি প্রদানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে প্রেরিত পত্রে যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তারা হচ্ছেন বর্তমানে প্রশাসন বিভাগের পরিচালক এম এ তালেব, সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগ এর পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভুঁইয়া এবং অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগ এর পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ। পরিচালক এম এ তালেব উপ-পরিচালক পদে ৪ বছরের স্থলে মাত্র ৩ বছর ২৬ দিন চাকুরি করে পদোন্নতি পেয়েছেন, পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভুঁইয়া উপ-পরিচালক পদে ৪ বছরের স্থলে চাকুরি করেছেন মাত্র ৬ মাস এবং পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদ ৪ বছরের স্থলে চাকুরি করেছেন মাত্র ১ বছর ২২ দিন। অর্থাৎ পদোন্নতির ন্যূনতম যে যোগ্যতা তা পূরণ না করেই পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন এই তিন কর্মকর্তা শুধু তাই নয় দখল করে আছেন বিটিআরসির গুরুত্বপূর্ণ সব পদ।

 

মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার অভিযোগ-

বিটিআরসিতে অপর এক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান এর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকেই আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে পরিচালিত তদন্তকে প্রভাবিত ও বিলম্বিত করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয় পাঁচ আগস্ট পরবর্তী বিটিআরসির অবৈধ নিয়োগ নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটির আহ্বায়ক করে এই কর্মকর্তাকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও নির্ধারিত সময় সীমা পার হওয়ার পরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন।