
সুধাসদন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক পারিবারিক আবাসস্থল। ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন। নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরব থাকতো পুরো এলাকা। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর থেকে এটি পরিত্যক্ত। ভবনের কাঠামো ছাড়া আর কিছু নেই। পরিত্যক্ত এই ভবনটি এখন অপরাধীদের আখড়া। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় আশপাশের বাসিন্দারা। ভবনের সামনের দেয়ালে দেখা গেছে কয়েকটি নোটিশ টাঙানো। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে এসব নোটিশ দেয়া হয়েছে সরকারি পৃথক দপ্তর থেকে।
গত ৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে শেখ হাসিনার লাইভে আসাকে কেন্দ্র করে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর গত ৬ই ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডি ৫/এ-তে অবস্থিত সুধাসদনও পুড়িয়ে দেয়া হয়। সরজমিন দেখা যায়, চারতলা বাড়িটিতে কোনো আসবাবপত্র নেই। ভবন জুড়ে এখনো রয়েছে পোড়া ছাই। প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টাইলস ও কাঁচের ভাঙা টুকরো। ভাঙা-টাইলস ও কাঁচের টুকরার জন্য সেখানে হাঁটার উপায় নেই। ভুতুড়ে আবহ পুরো ভবনে। ভবনটির সামনের দেয়ালে চারটি নোটিশ টানানো। যেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করার কারণে শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২২ দিনের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। আরেকটি নোটিশে কর ফাঁকি দেয়ার কারণে ১০ই আগস্ট শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। অপর একটি নোটিশে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে কোনো টাকা না দিয়ে গুলশান-২ এ একটি ফ্ল্যাট অবৈধভাবে দখল করার জন্য টিউলিপ সিদ্দিকীকে দুদকের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়। ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় ভাঙা টাইলস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রতিটি ফ্লোরে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখা যায় মাদকের আলামত। পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর খালি প্যাকেটও পড়ে থাকতে দেখা যায় প্রতিটি ফ্লোরে। কিছুক্ষণ পর পর কিশোররা ভবনটিতে প্রবেশ করছে, মূলত মাদক সেবনের জন্য সেখানে যায় তারা। আবার অনেককে নারীসঙ্গী নিয়েও প্রবেশ করতে দেখা যায় ভবনটিতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো নজরদারি না থাকায় প্রায় সারাদিন এভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক, মাদকসেবী এবং নারীদের নিয়ে অনেকে এ ভবনে প্রবেশ করে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এমন ঘটনা বেশি ঘটে। ধানমণ্ডি লেক এলাকার অপরাধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ভবনটি।
পাশের বাড়ির এক কেয়ারটেকার বলেন, যে কেউ এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই বুঝে যাবে, ভেতরে কী চলে। আমরা ভয়ে থাকি, কাউকে কিছু বলি না। কম বয়সী উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের আড্ডাখানা হয়ে গেছে এই জায়গা। মেয়ে নিয়েও অনেকে আসে। ভয়ে আমরা কাউকে কিছু বলতে পারি না।
সুধাসদন সংলগ্ন সড়ক দিয়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তারেক হোসেন। তিনি বলেন, ধানমণ্ডি এলাকায় হাঁটার জন্য খোলামেলা পরিবেশ না থাকায় এ রোড দিয়ে নিয়মিত হাঁটি। কিন্তু সুধাসদন ভবনটির সামনে আসলে প্রায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। এখানে উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা আড্ডা দেয় নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে আবার অনেককে দেখি নারী নিয়ে বের হতে। এমনভাবে এখানকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখন কোন পথচারীকে তারা আক্রমণ করে বসে এ ভয়ে সবাই এ সড়কটি এড়িয়ে চলতে চায়।
ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, আমরা নিয়মিত সকল পরিত্যক্ত ভবনে অভিযান পরিচালনা করছি যেন পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে অপরাধীরা আড্ডা না দিতে পারে। সুধাসদন ভবনটিতে আমাদের পেট্রোল টিম নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।