দেশের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে। এসব কমিটির অনেকগুলোর আবার মেয়াদ নেই। রুটিন দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও কমিটির হাতে অপ্রয়োজনে নিয়োগ এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। অ্যাডহক কমিটির পরিচালনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফেরাতে নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা জরুরি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক সংকট থাকলেও নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া কোনও শিক্ষক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বা প্রভাব খাটালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ২০ আগস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই আদেশে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসক এবং মহানগর এলাকায় বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। ২১ আগস্ট নতুন করে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ওই আদেশে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গভর্নিং বডি, ম্যানেজিং কমিটি, অ্যাডহক কমিটি বা নির্বাহী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধি, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা তার মনোনীত প্রতিনিধি এবং মহানগরে বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার বা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শিক্ষা বোর্ডের ওই আদেশে যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছিল, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাডহক কমিটি গঠনের অনুমোদন নিতে বলা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিলেও করতে পারেনি। কারণ চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা কমিটির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে নতুন আরেকটি আদেশ জারি করে।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়েছে বা হবে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই কমিটি কর্তৃক নিয়মিত কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ফলে দেশের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে।
২১ নভেম্বরের পর গঠন করা অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা অনেক আগেই। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান পরে কমিটি গঠন করে অনুমোদন নিয়েছে সেগুলোর মেয়াদ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান নির্দেশনার পরপরই কমিটি গঠন করে, সেগুলোর মেয়াদ নেই। কারণ দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য জারি করা বিধি অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ থাকে ছয় মাস।
রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অ্যাডহক কমিটিগুলোতে বর্তমান প্রভাবশালী দলীয়রা সভাপতি ও অভিভাবক প্রতিনিধি হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। কমিটিগুলো বিগত সরকারের সময়ের চেয়ে আরও দলীয় কমিটিতে পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত কমিটিগুলো যাতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে।
মেয়াদহীন কমিটির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি-চাকরিচ্যুতি
সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় থেকে দুই দফায় ১১ জন নারী শিক্ষক ও একজন পুরুষ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছে মেয়াদহীন অ্যাডহক কমিটি। শুধু তাই নয়, এই কমিটি ৫৮ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগে দুটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এবং ১৪ জনের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছে; যা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করে বাংলা ট্রিবিউন। শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন পেয়েছে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি। এর মেয়াদ শেষ হয় গত ২৭ জুলাই। অথচ এই কমিটি চলতি আগস্ট মাসেও একদিকে নিয়োগ দিচ্ছে, অন্যদিকে চাকরিচ্যুত করছে শিক্ষকদের।