Image description
বাংলাদেশের পোশাকে মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের আগ্রহ

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প। কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সর্বত্রই এ খাতের অবদান স্পষ্ট। যদিও সম্প্রতি শুল্ক ইস্যুতে এই খাত অনেকটা টালমাটাল ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের পোশাক পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমানোয় সেই অবস্থা থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোয় কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে রফতানিতে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা চীনা পণ্যে এ হার ৭৫ শতাংশের মতো। আর বাংলাদেশের ২০ শতাংশ। দেশীয় পোশাক উৎপাদকদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ কারণে হঠাৎ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। পুরোনো ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনেকেই ফিরছেন। রফতানি আদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় আছে কি-না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন নতুন ক্রেতারাও। এমনকি এক বছর আগেও যে কারখানায় মার্কিন কোনো ক্রেতার কাজ ছিল না, গত কিছুদিন থেকে নতুন-পুরোনো অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আলোচনা শুরু করেছে। যা বাংলাদেশকে পোশাকের অর্ডারের একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে এবং শিল্পে নতুন বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

গ্রীষ্মকালীন রফতানি আদেশের কাজ শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে এই সম্ভাবনার মধ্যে এখনো শঙ্কা আছে। দক্ষিণ এশিয়ার আধিপত্যের লড়াইয়ে চীন ও ভারতের দ্বৈরথ দীর্ঘদিনের। নানা কারণেই কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে একমত হতে পারে না দুই প্রতিবেশী। নতুন করে টানাপড়েন চলছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ বলছে, চীনের প্রধান বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র যেন ঝগড়া শুরু করেছে এশিয়ায় চীনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে। তবে এবার যেন চিরচেনা দ্বন্দ্ব ভুলে হাতে হাত মেলাতে চাচ্ছে দুই দেশ। ট্রাম্পের শুল্ক ‘জরিমানা’, চীন-ভারত সম্পর্কের বরফ কি গলবে। যদিও এ পরিস্থিতিতে চীন ও ভারত পরস্পরকে কতটা বিশ্বাস করবে? আবার কে কাকে কতটাই-বা ছাড় দেবে? যা খুব শিগগিরই সামনে আসছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের উন্নয়নের ওপরও নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বাজারের আগামী দিনের সম্ভাবনা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংাদেশের সম্ভাবনায় আরেক বড় বাধা দেশীয় সমস্যা। বিশেষ করে জ্বালানি ঘাটতি- বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট। গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে এই শিল্প। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ দূরে থাক, প্রয়োজন-মাফিক বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাপও থাকে না। শুধু পোশক খাতই নয়; ধুঁকছে স্টিল মিল, সিরামিক শিল্প ও খাদ্যপণ্য উৎপাদন। পাশাপাশি গড়ে উঠছে না নতুন শিল্প। কারণ গ্যাস সঙ্কটে শিল্পে নতুন সংযোগ প্রায় বন্ধ। পুরোনো কারখানায় লোড বাড়ানোর অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না। শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমেছে। বাড়ছে না কর্মসংস্থান; বরং গ্যাস সঙ্কটে চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব। একই সঙ্গে ‘অর্থনীতির হার্ট’ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘লাইফ লাইন’ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের দুরবস্থা। বেহাল দশার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন এখন ‘মরণফাঁদ’। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অংশে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ থেকে মেঘনা-গোমতী সেতুর ওপর পর্যন্ত ১৫-২০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট যেন প্রতিদিনকার চিত্র। একই সঙ্গে লাঙ্গলবন্দ সেতুর বেহাল অবস্থার যানবাহনের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালামাল পরিবহনে দ্বিগুণ সময় লাগছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে মূল সমস্যা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ। এই সমস্যাগুলো পোশাক শিল্পের উৎপাদন ও রফতানিকে বাধাগ্রস্ত করছে, যদিও ভারত-চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের কারণে রফতানি আদেশে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। কিন্তু রফতানি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন করতে দ্রুত বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট দূর করতে হবে।
সূত্র মতে, বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর মার্কিন ‘পাল্টা শুল্ক’ কাঠামোয় এ পর্যন্ত যতটুকু পরিবর্তন, তাতে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মার্কিন ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। পুরোনো ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের অনেকেই ফিরছেন। রফতানি আদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় আছে কি-না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন নতুন ক্রেতারাও। আগামী শীতের জন্য আসা রফতানি আদেশের কাজ শেষ। গ্রীষ্মের জন্য রফতানি আদেশ আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে আসা শুরু হবে। এ সময়টিতে সাধারণত রফতানি আদেশ কম থাকে। তারপরও এবার অনেক রফতানি আদেশ আসছে। এগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতসহ অন্য দেশ থেকে স্থানান্তর হয়ে আসা।

পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, নতুন করে রফতানি আদেশ আসছে। এক বছর ধরে আমার কারখানায় মার্কিন কোনো ক্রেতার কাজ ছিল না। গত এক সপ্তাহে নতুন-পুরোনো অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আলোচনা শুরু করেছে।

ফ্লোরেন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম বলেছেন, ১০ লাখ পিসের একটি রফতানি আদেশ পেয়েছেন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলে পরিমাণে আরো রফতানি আদেশ দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে ওই ক্রেতা। প্রতিষ্ঠানটি আগে ভারত থেকে পণ্য নিত। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা’ ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারত থেকে রফতানি আদেশ প্রত্যাহার করে আনা হয়েছে বলে ক্রেতার বরাত দিয়ে জানান তিনি। মোহাম্মদ হোসনে কামার আলম বলেন, এ রকম অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান খোঁজখবর নিচ্ছে। চীন থেকেও রফতানি আদেশ আসছে। ভারত এবং চীনা পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কের ফলে এ রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যে প্রথমে ৩৭ এবং পরে ৩৫ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপের ঘোষণা দেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় রফতানি আদেশ স্থগিত, বাতিল কিংবা পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন শর্তে শেষ পর্যন্ত শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টেক্সটাইল প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গত সোমবার। সেখানে নিজস্ব পণ্য প্রদর্শন করছে নারায়ণগঞ্জভিত্তিক প্যাসিফিক সোয়েটার্স। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, শুল্ক কাঠামোর নতুন বাস্তবতায় প্রদর্শনীতে অনেক ক্রেতা তার সঙ্গে রফতানি আদেশ নিয়ে আলোচনা করেছে। আরো অনেক ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। তিনি বলেন, মার্কিন একটি বড় ব্র্যান্ডের রফতানি আদেশের ৬০ হাজার পিস টি-শার্টের কাজ চলছিল তার কারখানায়। নতুন শুল্কের ঘোষণা আসার পর ব্র্যান্ডটি কাজ বন্ধ রাখতে ইমেইল করেছিল। মাঝপথে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাদের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। রফতানি আদেশটি পুনর্বহাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকাভিত্তিক মার্কিন বায়িং হাউস লিয়াং ফ্যাশনের মোট রফতানি আদেশের ৯৯ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিষ্ঠানটির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, শুল্ক হ্রাসের ঘোষণার দিনই মার্কিন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৭৬ হাজার ৬০০ পিস লং প্যান্ট ও শর্টসের রফতানি আদেশের কাজ আবার শুরু করতে বলেছে। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রফতানি আদেশ বাংলাদেশ আসবে বলে আশা করেন তিনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা সঙ্কটে ফেলেছে বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট। দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে চলমান গ্যাস সঙ্কট নিরসন এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ। সম্প্রতি সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না পাওয়ার কারণে অনেক কারখানা তাদের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না, যা রফতানি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাক শিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। অবশ্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, বেসরকারি উদ্যোগে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত পোশাক শিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে।

সূত্র মতে, চাহিদার তুলনায় গ্যাস মিলছে ৪০ শতাংশ কম। কলকারখানার চাকা ঘুরছে ধুঁকে ধুঁকে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ভালুকাসহ দেশের সব শিল্পাঞ্চলেই অভিন্ন পরিস্থিতি। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত। গ্যাসের অভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে এ খাতের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।

অধিকাংশ শিল্পে রাতে মিললেও দিনে গ্যাস যেন দুষ্প্রাপ্য। কাজ না থাকায় অনেক কারখানার শ্রমিক দিনে অলস সময় কাটাচ্ছেন। রাত থেকে ভোরের সময়ে গ্যাসের চাপ বাড়লেই ঘুরে কারখানার চাকা। শ্রমিককে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে সে সময় কাজে নামানো হয়।

অনেক উদ্যোক্তা সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। বিকল্প জ্বালানি ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে উৎপাদন খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু কারখানা। শুধু নারায়ণগঞ্জেই ২৫টির মতো পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রফতানি আয়েও। এছাড়া গ্যাস সঙ্কটে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় আমদানিকারকদের অর্ডার সময়মতো পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিল্প-মালিকরা। তারা বলছেন, সময়মতো পণ্য পাঠাতে না পারায় বাতিল হচ্ছে রফতানি আদেশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার ফিনিশিং সেকশনে মাত্র ৫০০ কেজির একটি ছোট বয়লার। সেটিও চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারারাত অপেক্ষা করে সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস এনে বয়লার চালাতে হয়। যারা বড় বড় বয়লার চালান, তাদের কী অবস্থা? তিনি জানান, সরকারকে শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঙ্কট কাটাতে আপাতত এক জাহাজ এলএনজি আমদানি করে শিল্পে দেয়া হোক। এ সংক্রান্ত সব ব্যয় উদ্যোক্তারা বহন করবেন। এখনো সরকারের তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিল্প-কারখানায় তীব্র জ্বালানি সঙ্কট, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বিভিন্ন সঙ্কটজনিত কারণে উৎপাদন খরচ ক্ষেত্রবিশেষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে, বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে, ডলারের সঙ্কট, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি, ব্যাংক সুদের হার ৯ থেকে ১৫-১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং রফতানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক কমে গেছে। এসক কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশীয় টেক্সটাইল মিলগুলো বিশেষ করে স্পিনিং সেক্টর মারাত্মক সঙ্কটে পড়েছে। দেশের স্বার্থে দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান শওকত আজিজ রাসেল। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জ্বালানি সরবরাহকে বড় উদ্বেগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের সঙ্কট যতটা দেখা যায়, বাস্তবে এটি তার চেয়ে আরো গভীরতর। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির তুলনায় গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন বন্ধ রাখা ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং।