Image description

কিশোরগঞ্জে মাদক ব্যবসা নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা যুবদলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আলী আব্বাস রাজন গ্রুপ এবং সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক এমদাদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার বৌলাই পুরান বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইমরানুল হক হিমেল (২৪) নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। নিহত হিমেল বৌলাই ইউনিয়নের মূল সতাল চরপাড়া গ্রামের হবি মিয়ার ছেলে ও রাজনের অনুসারী। হিমেলের নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকালে রাজন গ্রুপের লোকজন এমদাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা যুবদলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আলী আব্বাস রাজন এবং সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নতুন বৌলাই এলাকার বাসিন্দা এমদাদ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে শুক্রবার দুপুরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রাজন গ্রুপের ইমরানুল হক হিমেল এবং এমদাদ গ্রুপের লিয়াকত গুরুতর আহত হয়। আহত দু’জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ইমরানুল হক হিমেল মারা যায়। ইমরানুল হক হিমেল জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের ভাগনে। তার মৃত্যুসংবাদ এলাকায় পৌঁছালে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট এবং আগুন দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এমদাদের স্ত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, বাড়িতে কেউ ছিল না। হঠাৎ করে শত শত লোক বাড়িতে এসে লুটপাট করে। যে জিনিসপত্রগুলো নিতে পারে নাই সেসব জিনিসপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং বাড়িতে আগুন দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী নিহত হিমেলের মামাতো ভাই আরাফাত বলেন, দু’পক্ষই ইটপাটকেল ছুঁড়ছিল। পরে এমদাদের গ্রুপ ছররা গুলি করে। এ সময় হিমেল ভাই পায়ে পায়ে বাড়ি খেয়ে পড়ে যায়। পরে সঙ্গে সঙ্গে এসে হিমেল ভাইকে কুড়াল দিয়ে পিঠে, কবজিতে কোপাইছে। এমদাদ তখন বলে, “আমার ভাই, আমার ভাই।” এই কথা বলে কোলে তুলে আবার আছাড় মারে। আমি হিমেল ভাইয়ের কাছে গেলে হিমেল ভাই আমাকে গাড়ি আনতে বলে। কিন্তু কোনো গাড়ির চালক গাড়ি নিয়ে আসতে চায়নি। বহু কষ্টে একজনকে রাজি করিয়ে আনার পর এমদাদ পিস্তল বের করে। আমি এমদাদের হাতে থাকা পিস্তল কেড়ে নিয়ে দৌড় দিলে এমদাদ হিমেল ভাইয়ের গলায় দা ধরে। দা ধইরা বলে পিস্তল দিয়া যা না হয় জবাই করে ফেলবো। পরে আমি আবার পিস্তল দিয়ে দিই। কিশোরগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন বলেন, এটা দলীয় কোনো বিষয় না। ঘটনাটি ঘটেছে তাদের দুইজনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না। এটা মাদক না হয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটেছে। আমরা দলীয় তদন্ত করে কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা পেলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করবো।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বৌলাই ইউনিয়নে এমদাদ এবং রাজনের মধ্যে একটা ঝগড়া ছিল। সেই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে একটা মারামারি হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যায়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।