Image description

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিতে যারা বিগত সময়ে অঙ্গীকার করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন তারা নির্বাচনে পরাজয় বহন করেছেন। কারণ অঙ্গীকারনামা দিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার বিষয়টি আইনজীবী সমাজ ভালো চোখে দেখেন না। একইভাবে আগামী ২৮ আগস্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী ভোটে আইনজীবী সমাজ বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেল কিংবা জামায়াত ইসলামীর প্যানেলের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে আশংকা করছেন আইনজীবীরা। সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ বিএনপি পন্থী আরও ১৩ জন আইনজীবী বিগত বছরে লিখিত অঙ্গীকারনামায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পরবর্তী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন না। কিন্তু ১৩ জন আইনজীবী অঙ্গীকারনামা মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও সরকার হুমায়ুন কবির ও আনোয়ার প্রধান নির্বাচনে অটল রয়েছেন।

আইনজীবীদের সূত্রে, ২০১২ সালে গোপনে সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানকে লিখিত অঙ্গীকারনামায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল বারী ভূইয়া। সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ২০১৩ সালে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচনে সভাপতি পদে অংশগ্রহণ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আব্দুল বারী।

২০১২ সালে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে সভাপতি নির্বাচিত হোন আব্দুল বারী ভূইয়া। ওই নির্বাচনকালে সাখাওয়াতকে গোপনে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়েছিলেন বারী ভূইয়া যেখানে তিনি অঙ্গীকার করেন, ২০১২ সালের নির্বাচনে বারী ভূইয়া নির্বাচন করবেন এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে বারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সাখাওয়াতকে সমর্থন করবেন। ওই সময় বিএনপির সাবেক নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের জুনিয়র ছিলেন সাখাওয়াত ও বারী। তৈমূর আলম ছিলেন বিএনপির সকল সিদ্ধান্তের অধিপতি।

ওই নির্বাচনে তৈম‚র আলম সাখাওয়াতকে প্রার্থী করতে সম্মত হলেও সরকার হুমায়ুন কবির ও জাকির হোসেন তৈম‚র আলমকে বলেন, সাখাওয়াত সভাপতি হলে তাদের রাজনীতি থাকবে না। তাই আবারো বারী ভূইয়াকে সভাপতি প্রার্থী করতে চাপ সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে তৈম‚র আলমের মাসদাইরের বাসায় আইনজীবী ফোরামের সভা আহবান করা হলে সেই সভায় সকল আইনজীবীরা বারী ভূইয়াকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেন। সভা থেকে সাখাওয়াত অশ্রুসিক্ত চোখে বের হয়ে আসেন এবং নির্বাচনে একক স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে আওয়ামীলীগ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আনিসুর রহমান দিপু ও বিএনপি প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী বারী ভূঁইয়াকে পরাজিত করে সাখাওয়াত বিজয়ী হোন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাখাওয়াতকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এবার একইভাবে নির্বাচনে না দাঁড়ানোর লিখিত অঙ্গীকার করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সভাপতি পদে সরকার হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ার প্রধান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী সরকার হুমায়ুন ও আনোয়ার প্রধানের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট তলবী সভার মাধ্যমে বিগত পরিষদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন কমিশন ও সমিতির এডহক কমিটি গঠন করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করা হলেও ২৫ আগস্ট চ‚ড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের দিন বিনা ভোটে বিএনপির ১৫ জন আইনজীবী ও জামাতের ২জন আইনজীবী বিজয় লাভ করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির সভাপতি পদে রেজাউল করিম খান রেজা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে এসএম গালিব মনোনয়ন ফরম কিনতে চাইলেও তাদের কাছে ফরম বিক্রি করেনি বিএনপি। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গেলে সমিতির নির্বাচন কমিশনও তাদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেনি। উল্টো সেদিন সাখাওয়াত ও আনোয়ার পন্থী জুনিয়র আইনজীবীদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন রেজা খান ও গালিব সহ তাদের অনুগামীরা।

এবার বিএনপির বিদ্রোহী প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী রেজাউল করিম রেজা খান ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসএম গালিব সহ ১৪ জন প্রার্থী হয়েছেন বিভিন্ন পদে। একই সঙ্গে জামায়াত ইসলামীর ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের প্যানেল থেকে সভাপতি পদে হাফিজ মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাঈন উদ্দীন আহমেদ সহ ১৭ জনের প‚র্ণ প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর আগে ১২ আগস্ট প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপির আইনজীবী ফোরাম ভোটাভুটি করেন। সেখানে আনোয়ার প্রধান একচেটিয়া ভোট পেলেও মাত্র দুই ভোট বেশি পেয়ে সভাপতি প্রার্থী হোন সরকার হুমায়ুন কবির। দুই ভোট কম পাওয়ায় সভাপতি প্রার্থী হতে পারেনি জাকির হোসেন। এতে স্পষ্ট যে, আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীদের অর্ধেক ভোটের আস্থা সরকার হুমায়ুন কবিরের উপর নেই। ওইদিন আরও শতাধিক ভোটার অংশগ্রহণও করেননি। রেজা খান ও হাফিজ মোল্লার চেয়ে দুর্বল প্রার্থী হিসেবে সরকার হুমায়ুন কবিরকে মনে করছেন আইনজীবীরা। আনোয়ার প্রধান শক্ত প্রার্থী হলেও সেদিকে মনে করা হচ্ছে এসএম গালিব ও মাঈন উদ্দীনেরও সক্ষমতা রয়েছে জয়ের। ফলে দেখার বিষয় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ফলাফল তাদের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনে।