Image description

জরুরি চিকিৎসার জন্য দ্রুত ও নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছাতে মানুষ অ্যাম্বুলেন্স খোঁজেন। এমন ‘জরুরি মুহূর্তকে’ পুঁজি করে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো ঘিরে প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে ‘অ্যাম্বুলেন্সের সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেট বা চক্র রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে।

রোববার (১৭ আগস্ট) দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরের পাঁচটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এই পাঁচ শহর হলো রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ।

বড় এসব হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ‘অপ্রতুলতা’ রয়েছে। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর মানুষকে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রতিটি হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের দাপটের কথা জানিয়েছেন অনেকে। প্রকাশ্যে এমন তৎপরতা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৪ আগস্ট রাত আটটার দিকে শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি ক্লিনিকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে চালককে মারধর করার ঘটনা ঘটে। এ  ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক নবজাতকের মৃত্যু হয়
১৪ আগস্ট রাত আটটার দিকে শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একটি ক্লিনিকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে চালককে মারধর করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক নবজাতকের মৃত্যু হয়ছবি: সংগৃহীত

‘বাইরের’ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করায় গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রোগী নিতে বাধা দেন সিন্ডিকেটভুক্ত অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্ট ও নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের এমন নির্মমতা দেশে এর আগেও ঘটার অভিযোগ রয়েছে। নবজাতকের মৃত্যুতে বিষয়টি আবারও সামনে এল। আলোচিত এ ঘটনায় শিশুটির বাবার করা মামলায় গত শনিবার প্রধান আসামি সবুজ দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনার বিষয়ে দেশে কোনো নীতিমালা নেই। তবে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তাঘাটে বা হাসপাতালের বাইরে যেসব অ্যাম্বুলেন্স চলে, সেগুলোর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল ‘অ্যাম্বুলেন্সে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, হাসপাতালের কর্মচারী ও প্রভাবশালীরা ‘সিন্ডিকেট’ করে বেশি ভাড়া আদায় করেন। বিআরটিএ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নির্ধারণের কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, জানতে চাইলে তখন সংস্থাটির পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, খুব শিগগির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে।

যেভাবে ভাড়া চাচ্ছে, আমরা তো নিরুপায়। ভাড়া যদি নির্ধারণ করে দেওয়া থাকত, তাহলে ইচ্ছেমতো ভাড়া কেউ চাইতে পারত না।’
জামান মিয়া, রোগীর স্বজন

ইচ্ছেমতো ভাড়া

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শেরপুরের শ্রীবর্দীর পুরোরা এলাকায় নিজের স্বজনকে নিয়ে যেতে রোববার সকাল ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছিলেন জামান মিয়া। জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের সারি। কোনো অ্যাম্বুলেন্স তিন হাজার টাকা, কোনোটা চার হাজার টাকা, কোনোটা সাড়ে চার হাজার আবার এসি গাড়ি পাঁচ হাজার টাকা চায়। জামান বলেন, ‘যেভাবে ভাড়া চাচ্ছে, আমরা তো নিরুপায়। ভাড়া যদি নির্ধারণ করে দেওয়া থাকত, তাহলে ইচ্ছেমতো ভাড়া কেউ চাইতে পারত না।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দাঁড়ালে প্রথমেই চোখে পড়ে সারি সারি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। রোববার সকালে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে আসা রোগীর স্বজনদের হাতে ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছেন চালকেরা। দূরত্ব একই হলেও একেক চালক একেক রকম ভাড়া চাইছেন।

রোগীর স্বজন পরিচয়ে কথা বলার সময় হাফিজুর রহমান নামের এক চালক কার্ড দিতে দিতে বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় যায় না। তিনি দুভাবে সেবা দিতে পারবেন। ঢাকা পর্যন্ত আট হাজার টাকা নেবেন। আবার চাইলে ছয় হাজার টাকায়ও পাঠাতে পারবেন; সে ক্ষেত্রে খুলনা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ঢাকাগামী ফাঁকা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে তুলে দেবেন।

রোববার সকালে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে আসা রোগীর স্বজনদের হাতে ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছেন চালকেরা। দূরত্ব একই হলেও একেক চালক একেক রকম ভাড়া চাইছেন।

সেখানে আরও দুজন চালক ঢাকায় যেতে যথাক্রমে ৯ হাজার ও সাড়ে ৮ হাজার টাকা চান। পাশাপাশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে গেলে ‘নানা সমস্যা’র কথাও বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। এর বাইরেও অক্সিজেন ফিসহ নানা ধরনের ফি যুক্ত করা হয়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনের ভাড়া নির্ধারিত নেই। ফলে যে যাঁর মতো ভাড়া আদায় করেন।

গত রোববার শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালক আলী হোসেন বলেন, ‘যখন অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা কম থাকে, তখন আমরা পাঁচ-ছয় হাজার টাকায়ও ঢাকায় রোগী পরিবহন করি। আবার যখন খুব ক্রাইসিস থাকে, তখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকাও নিই, এটা সত্য।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সব সময় এভাবে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকে। গত বুধবার দুপুরে

 

অবশ্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও সেটি চালকেরা মানেন না। হাসপাতালে টাঙানো ভাড়ার সাইনবোর্ডে দেখা গেছে, প্রথম ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৫ টাকা এবং এর বেশি দূরত্বের জন্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। এসি হলে তা ৪০ টাকা হারে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনের ভাড়া নির্ধারিত নেই। ফলে যে যাঁর মতো ভাড়া আদায় করেন।

গুগল ম্যাপের হিসাবে রাজশাহী থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব ২৫৭ কিলোমিটার। সেই হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা সাত থেকে আট হাজার টাকা।

হাসপাতাল চত্বরে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক চালক বলেন, ‘এখান থেকে ঢাকায় রোগী নিতে আমরা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিই। সরকারি রেটে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের খালি ফিরে আসতে হয়।’

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ও মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট আছে, এটা সবাই জানে। এর শিকড় অনেক গভীরে। আমরা অসংখ্যবার জরিমানা করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। হাসপাতালের ভেতরে তারা যে অ্যাম্বুলেন্স রাখে, সেটাও সম্পূর্ণ অবৈধ।’

যখন অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা কম থাকে, তখন আমরা পাঁচ-ছয় হাজার টাকায়ও ঢাকায় রোগী পরিবহন করি। আবার যখন খুব ক্রাইসিস থাকে, তখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকাও নিই, এটা সত্য।
অ্যাম্বুলেন্সচালক আলী হোসেন

বাইরের অ্যাম্বুলেন্সে নিতে বাধা

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শেরপুরের নকলা থেকে রোগী নিয়ে আসেন অ্যাম্বুলেন্সচালক আল আমিন। ফেরার পথে তিনি হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী নিতে পারছেন না জানিয়ে বলেন, ‘এখান থেকে স্থানীয় সিন্ডিকেটের বাইরে রোগী নেওয়া যায় না। যদি রোগী নিতে চাই, তাহলে ভাড়ার অর্ধেক টাকা এই সিন্ডিকেটকে দিয়ে দিতে হয়।’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে ১৫০টির মতো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর একটির চালক শফিকুল ইসলাম। রোগী না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধরেন জামালপুর গেলাম রোগী নিয়ে। ফিরতি পথে কোনো রোগী নিয়ে আসতে চাইলে রোগীর সঙ্গে ভাড়ার যে চুক্তি হয়, তার অর্ধেক টাকা সেখানের সিন্ডিকেটকে দিয়ে দিতে হয়। সে কারণে আমরাও এখান থেকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সকে রোগী নিতে দিই না।’

রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর ফটকে স্বজনের মরদেহ বাড়ি নিতে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছিলেন আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী থেকে এসেছিলেন। হঠাৎ স্বজনের মরদেহ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে দেখে এগিয়ে গিয়ে তিনি জানতে চান, ‘আমি তো কোনো অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই করিনি, আপনারা মরদেহ তুলছেন কেন?’

এখান থেকে ঢাকায় রোগী নিতে আমরা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিই। সরকারি রেটে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের খালি ফিরে আসতে হয়।
জাহাঙ্গীর আলম, চালক

তখন চালক ও তাঁর সঙ্গীরা জানান, তাঁরাই মরদেহ নিয়ে যাবেন। ভাড়া কত জানতে চাইলে চালক সরাসরি আট হাজার টাকা দাবি করেন। আবদুস সামাদ বোঝানোর চেষ্টা করেন, এই দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া তো চার হাজার টাকা হবে। তিনি আট হাজার টাকায় যাবেন না, অন্য গাড়ি নেবেন। তখন চালকের সাফ জবাব, ‘এই গাড়িতেই নিতে হবে। এখান থেকে আর কোনো গাড়ি এই লাশ নেবে না।’ উপায় না দেখে অসহায় আবদুস সামাদকে সেই সিন্ডিকেটের কাছে হার মানতে হয়। তিনি বলেন, ‘কী আর করা, লাশ নিয়ে তো আর অপেক্ষা করা যায় না।’

অন্য হাসপাতালগুলোতেও প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে। সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডের সভাপতি রুমান আহমদের দাবি, রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তার জন্যই স্ট্যান্ডের বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করতে দেওয়া হয় না। দেশের যেকোনো হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে আসতে হলে সেখানে থাকা স্ট্যান্ডের অনুমতি নিতে হয়।

উপায় না দেখে অসহায় আবদুস সামাদকে সেই সিন্ডিকেটের কাছে হার মানতে হয়। তিনি বলেন, ‘কী আর করা, লাশ নিয়ে তো আর অপেক্ষা করা যায় না।’

সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ঘাটতি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব হাসপাতালেই বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট জেলার ভেতর হলে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাওয়া যায়। তবে সেখানেও সমস্যা রয়েছে। কোনো হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলে চালক নেই, কোনোটিতে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের সংকট। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে চারটি সচল আছে। চালক পাঁচজন। অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি তাঁদের হাসপাতালের অন্য গাড়িও চালাতে হয়। ফলে ‘চালকসংকটে’ এই হাসপাতাল থেকে বিভাগের বাইরে রোগী পরিবহন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের গাড়িচালকদের কার্যালয়ের সামনে নোটিশ বোর্ডে লেখা: সিলেট বিভাগের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয় না।

হাসপাতালের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুব আলম জানালেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে রোগী পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও একটি বিকল। বাকি পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটি দিয়ে রোগী পরিবহন করা হয়। জানতে চাইলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালকদের ইনচার্জ তানভীর হোসাইন বলেন, ‘বাকি তিনটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে চিকিৎসক আনা–নেওয়া করতে হয়। সে গাড়িগুলো অনেক পুরোনো। দেখা যায়, মাঝরাতে রোগীর জটিল পরিস্থিতিতে বড় ডাক্তারের প্রয়োজন হয়। তখন অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ডাক্তার আনতে হয়।’

শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলোর বিপরীতে চালক আছেন মাত্র তিনজন। ফলে এসব অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহনে খুব একটা কাজে আসছে না। গত রোববার দুপুরে জরুরি বিভাগের সামনে শুধু একটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থামানো অবস্থায় দেখা যায়, বাকি সব অ্যাম্বুলেন্সই ছিল বেসরকারি।

হাসপাতালের উপপরিচারক এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চালকসংকটে রোগী পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে ছয়টি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সচল অ্যাম্বুলেন্স আছে চারটি, যা রোগীর চাপের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা নয়

বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় হাসপাতালকেন্দ্রিক এসব অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়ে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, তাদের অনেকে আত্মগোপনে। বর্তমানে কোথাও চালকদের সমিতি আছে, আবার কোথাও নেই।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, অনেক কর্মচারীও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগী ঠিক করে দেওয়ার বিনিময়ে চালকদের কাছ থেকে কমিশন পেয়ে থাকেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে বরিশালের একজন অ্যাম্বুলেন্স মালিক দাবি করেন, কর্মচারীরা রোগী পরিবহনে সহযোগিতা করেন। এ জন্য হাসপাতালের কর্মীদের তো খুশি করতেই হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের জীবন জিম্মি করে এমন ব্যবসা বেআইনি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সুশাসনের অভাব এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এ ধরনের অমানবিক ও বেআইনি ব্যবসা এখন অনেকটা বৈধতা পেয়েছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন এম জসীম উদ্দীন, বরিশাল, মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ উত্তম মণ্ডল, খুলনা, মানাউবী সিংহ, সিলেট ও শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী]