
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের অভ্যন্তরে ২০০৯ থেকে ২০২৪-এ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। গত কয়েক বছরে সংস্থাটিতে ছাত্রলীগ ক্যাডার, আওয়ামী পরিবারের সদস্য এবং ভারত অনুগতদের ব্যাপকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যে কোনো সময় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) শামসুল হক এবং মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের এনএসআইকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ঘাঁটি হিসেবে তৈরি এবং আওয়ামীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকারে এসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমদকে বিশেষ বিবেচনায় সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মেজর জেনারেল পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেন। মনজুর আহমেদ ছিলেন শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কোর্সমেট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ‘র’-এরও বিশ্বস্ত বলে জানা গেছে। এ কারণে ‘র’-এর পরামর্শে তাকে এনএসআই পুনর্গঠনের নামে সংস্থার মহাপরিচালক করা হয়। এ পদে তিনি পাঁচ বছর ছিলেন। এ সময় এনএসআইকে তিনি বিরোধী মত দমনের কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি ‘র’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ করে দেন। মেজর জেনারেল মনজুর ও পরবর্তী ডিজিরাও এনএসআইকে এতটাই ‘র’ ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামীকরণ করেন যে, বলা হচ্ছে ‘আওয়ামী লীগ ফেরত এলে শেখ হাসিনার নামে প্রথম মিছিল বের হবে এনএসআই হেডকোয়ার্টার থেকে।’ এনএসআইয়ে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে যে জালিয়াতি হয়েছে তাও সবকিছুকে হার মানিয়েছে। নিয়োগ কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচালক প্রশাসন), আফজালুন নাহার (অতিরিক্ত পরিচালক) ও নাসির মাহমুদ গাজী (যুগ্ম পরিচালক)। এই নিয়োগ কমিটি নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অনুপ্রবেশ শুরু হয়। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গত পনেরো বছরে এনএসআই বলতে গেলে প্রায় পুরোপুরি ‘র’-এর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সূত্র জানায়, ‘র’-এর এনএসআই দখলের প্রত্যক্ষ কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৬-২০০১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের শাসনামলের শেষের দিকে। এ সময় ছাত্রলীগের (ডিবি হারুনের সমসাময়িক) একটি গ্রুপকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এনএসআইর সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী এই ব্যাচের ১৩ জন সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় পরবর্তী নতুন সরকারের (২০০১-২০০৬) সময় সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক তাদের চাকরির অবসান (সার্ভিস ডিসপেনসড উইথ) ঘটানো হয়। পরে এই ১৩ জন সরকারের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে তা খারিজ হয়ে যায়। তারা আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করলে তাও খারিজ হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বরাবর রিভিউ পিটিশন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে তার উপদেষ্টা এইচটি ইমাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক আদেশ বলে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধাসহ ওই ১৩ জনকে এনএসআইয়ের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। এই ১৩ জনের মধ্যে বর্তমানে ১২ জন রয়েছেন। এরা যোগদানের পর এনএসআইতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। এই ১২ জন এখন যুগ্মপরিচালক। তাদের মাধ্যমে পুনরায় শুরু হয় ‘র’-এর এনএসআই দখলের পরিবর্তিত কার্যক্রম। ‘র’-এর পক্ষে এনএসআইর ভেতর থেকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন শুরু হয় ২০০০-২০০১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের কেন্দ্র করেই। অথচ এই ১৩ জনকে পুনর্বহালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারি করা প্রশাসনিক আদেশটি ছিল এখতিয়ারবহির্ভূত এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার শামিল। এই ১৩ কর্মকর্তার মধ্যে আফজালুন নাহার ছাড়াও কর্মকর্তা ‘জহির’ চোরাচালন ও অর্থপাচারের মামলায় বিচারের সম্মুখীন। এছাড়া পুলিশের পলাতক এসপি প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের (‘র’-এর চিহ্নিত বড় এজেন্ট) স্ত্রী প্রয়াত বিপ্লবী রানী দাসকেও এনএসআইতে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লবী রানী দাসের আরেক আত্মীয়কেও চাকরি দেওয়া হয়। এদের মাধ্যমে ‘র’ খোলাখুলিভাবে তাদের কার্যক্রম চালায়।
২০০০-২০০১ ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) মনজুরের সহযোগিতায় চলতে থাকে ‘র’-এর পছন্দমতো লোক নিয়োগ। নিয়োগের পর এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে ‘র’-এর বাছাই করা কিছু কর্মকর্তাকে ভারত থেকে বিশেষ গোয়েন্দা ট্রেনিং করিয়ে আনা হয়। এ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক এনএসআই কর্মকর্তাকে কয়েক দফায় ‘র’ ভারতে প্রশিক্ষণ করিয়ে এনে এনএসআইর গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিশ্চিত করে। ‘র’ এনএসআইর মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বিটিভির সংবাদ পাঠিকা শিরিন শিলা ও ডিজির যৌথ মালিকানায় একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং টিঅ্যান্ডটি বোর্ড থেকে ‘আইজিডব্লিউ’ লাইসেন্স নেয়।
এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের আড়ালে ‘র’-কে সুবিধা দেওয়া হয় এবং অবৈধ কার্যকলাপ আড়ালের লক্ষ্যে গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুইচিং ও মিটারিং সিস্টেম বাইপাস করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে দায়সারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে। জানা গেছে, নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও কার্যকরী তথা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে টিঅ্যান্ডটির বেশিরভাগ টেকনিক্যাল স্থাপনা গোপনে সংযুক্ত করে তা ‘র’-এর গোপন অপারেশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। সামগ্রিক বিষয়টির গোপনীয়তার স্বার্থে এনএসআইর সিনিয়র পদে সশস্ত্র বাহিনী থেকে ‘র’-এর পছন্দ ও মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রেষণে কিংবা সরকারি চুক্তিতে এবং বিধিবহির্ভূত বা সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুইয়ের সমন্বয়ে এনএসআই চলে যায় ‘র’-এর পুরোপুরি দখলে। বিষয়টি কার্যকর করার জন্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদকে প্রথমে দুই বছরের চুক্তিতে এবং পরে তার চুক্তি পুনরায় একসঙ্গে তিন বছরের জন্য নবায়ন করা হয় অর্থাৎ তাকে এক নাগাড়ে পাঁচ বছর চুক্তিতে মহাপরিচালক রাখা হয় যা এনএসআইর ইতিহাসে নেই। এটা ‘র’-এর এনএসআই দখল ও তাদের অবস্থান সুসংহত করার নীলনকশার অংশ।
এনএসআইর ভেতরে ‘র’ নিয়ন্ত্রিত আরো একটি গোপন এনএসআই সৃষ্টি করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। ‘র’-এর অনুগত জনবল সময়ের বিবর্তনে এমন এক অবস্থানে এসেছে যে, বর্তমানে তারা এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক পদ থেকে শুরু করে সব পদ ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে দাপটের সঙ্গে পদায়িত। তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য নিয়োজিত আছে সশস্ত্র বাহিনী থেকে প্রেষণে, সরকারি ও বেসরকারি চুক্তি এবং অবৈধ পন্থায় তথাকথিত নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বেতন-ভাতাদি ‘সোর্স মানি’ থেকে মেটানোর পাশাপাশি তাদের জন্য গাড়ি, ড্রাইভার নিয়োগ ও সিকিউরিটি গার্ডও সোর্স মানি থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে এনএসআই সিকিউরিটি গার্ড সংক্ষেপে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে বলা হয় ‘এনএসজি’।
এনএসআইতে ২০০০-২০০১ ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা, যারা এইচটি ইমামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রশাসনিক আদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত তারা এবং ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের ব্যাপারে ‘র’ সব সময় তৎপর ছিল এবং এখনো রয়েছে। ২০১২ সালের ব্যাচটি নেওয়ার পর এনএসআইতে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০২২ ও ২০২৩ মোট পাঁচটি ব্যাচ যোগদান করে। এদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের পদধারী ক্যাডার এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীতে আওয়ামী কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন। ২০০০-২০০১ ব্যাচের চিহ্নিত ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে পরিচিত দুজন যুগ্ম পরিচালক পরবর্তী সময়ে তাদের ভাই-ভাতিজাসহ মোট ১৪২ জন আত্মীয়-স্বজনকে এনএসআইতে চাকরির ব্যবস্থা করিয়েছেন।
পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি নাহরিন চৌধুরী ২০২২ সালে লিখিত পরীক্ষায় ফেল করা সত্ত্বেও তাকে এনএসআইর সহকারী পরিচালক পদে চাকরিতে নেওয়া হয়। একই বছর তার স্বামী রুবাইয়েত ইমাম শোভনকেও সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। এই দুজনকেই স্ট্র্যাটেজিক শাখায় পদায়ন করা হয়। তার আরেক ভাতিজি তাহসিনা নাহলিন খানকে ২০২২ সালে এনএসআইতে চাকরি দেওয়া হয়। ২০২০ সালে এনএসআই নিয়োগ পরীক্ষায় পলাতক লে. জেনারেল (অব.) মুজিবের ভাতিজি ফারিয়া জামান মিশিতা মুজিবের গাড়িতে করে এসে বিকেলের পরীক্ষা সকালে দিয়ে চাকরি পান। মিশিতার স্বামী আসিফ ইবনে রশীদকেও একই বছর একই পদে চাকরি দেওয়া হয়। রশীদ ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে কর্মরত ছিলেন।
আমার দেশ-এ জেনারেল মুজিবের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে তাকে নিরাপদ স্থান হিসেবে ফেনীতে বদলি করা হয়। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের (২০১৪) ছেলে আবিদ রাব্বি মো. মুতাসিম বিল্লাহ ২০১৮ সালে এনএসআইতে উপপরিচালক হিসেবে চাকরি পান। তিনি স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস বিভাগে কর্মরত। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে এখন মামলা চলমান রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মেয়ে ফারাহ ফয়েজকে ২০২৩ সালে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। এখন ফারাহ প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করছেন। তাকে ২০২২ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালে তাকে স্থায়ী করা হয়। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজের চাচাতো ভাই আল আমিনকে ২০২০ সালে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়া হয়। তাকে সাতক্ষীরার দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেনারেল আজিজের অনুরোধে সে সময় তার আত্মীয় আরো ১১ জনকে এনএসআইয়ের চাকরিতে নেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি অনিক কামাল ও কামরুল হাসান ২০২০ সালে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন।
এনএসআইর নিয়োগ প্রক্রিয়া ধ্বংস হয় শেখ হাসিনার প্রথম আমলের শেষ সময় ২০০১ সালে। তখন থেকেই ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ঢোকানো শুরু হয়।
এনএসআইয়ের ওপর যেভাবে ‘র’-এর নজর পড়ে
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বা এনএসআই ৫৪ বছরের প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এনএসআইর যাত্রা শুরু করে। ১৯৮২ সালের দিকে কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতারের নেতৃত্বে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ নামে বাংলাদেশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। প্রকাশ্যেই তারা খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে ‘বঙ্গভূমি’ নামে হিন্দুদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের চক্রান্ত করেন। ভারতে আশ্রিতদের নিয়ে ‘বঙ্গসেনা’ নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতারকে দিয়ে এই ষড়যন্ত্র করানোর পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত ছিল। পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যও ‘র’ সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ‘র’-এর এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই সফলভাবে ভণ্ডুল করে দেয়। এরপর থেকেই ‘র’ নীলনকশা প্রণয়ন করে কীভাবে এনএসআইকে কবজা করা যায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেই সুযোগটি তারা লাভ করে এবং ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে এনএসআই অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর যেভাবে এনএসআই সাজান এবং তার নিয়োগ জালিয়াতি
২০০৯ সালে মেজর জেনারেল (অব.) মনজুর আহমেদ এনএসআইর মহাপরিচালক পদে আসীন হয়ে তিনটি কাজ করেন। সেগুলো হলো- বিগত সরকারের সময় যারা ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেলে প্রেরণ (যেমন- দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা), নিরপেক্ষ, সৎ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করা,
কেউ যাতে ভারত বা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে না পারে তার ব্যবস্থা, সংস্থার সব পদে ও নতুন পদ সৃষ্টি করে ছাত্রলীগের ক্যাডার, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও ভারতের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
মহাপরিচালক মনজুর আহমেদ ২০১১ সালে প্রায় ১০০০ এনএসআই সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ভারতীয় দূতাবাস থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকির জন্য তখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কমপক্ষে দুই সদস্যের স্পেশাল টিম ঢাকায় অবস্থান করছিল। প্রাথমিকভাবে ৩৬ জনকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত থাকলেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে ২০১৪ সালের নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের গোপন অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবে ১৪২ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই নিয়োগের জন্য একটি সার্কুলার জারির পর সাধারণ ছাত্ররা আবেদন করলেও ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কারো সুপারিশ ছাড়া অন্য নামে কারো প্রবেশপত্র (অ্যাডমিট কার্ড) বিতরণ করা হয়নি। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সুপারিশেও প্রবেশপত্র দেওয়া হয়।
এনএসআইর নিয়োগের আগে প্রার্থীদের তালিকা করা হয় পাঁচটি স্থান থেকে। সেই পাঁচটি স্থান হচ্ছে- মধুর ক্যান্টিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ভারতীয় দূতাবাস ও ভারতপন্থি সেনা কর্মকর্তা। সেই পাঁচ স্থানের কোনো একটি স্থান থেকে যদি নিয়োগে আগ্রহীরা ছাড়পত্র না পেতেন তাহলে তাদের এনএসআইয়ে নিয়োগ দেওয়া হতো না। জনকণ্ঠ, কালেরকণ্ঠ, ইত্তেফাক, ডেইলি সানসহ চিহ্নিত পত্রিকায় এই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগের রাতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির হাতে যায় চলে যায় এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
সূত্র জানায়, নিয়োগের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সিভি সংগ্রহ করা হয় এবং তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলম নির্বাচিত প্রার্থীদের ভাইভা নেন এবং সুপারিশপত্রসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে তালিকা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ সেলিম ও মির্জা আজম। ক্যান্টনমেন্টে ‘র’-এর পক্ষে কাজ করা সামরিক কর্মকর্তাদের সুপারিশে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এর সঙ্গে শেখ হাসিনা ও ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশ যোগ করে সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করে মনোনীত ব্যক্তিদের প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়। মনোনীত ব্যক্তিদের শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও ভাইভাতে আহ্বান করা হয়। এভাবেই ২০১১ সালে প্রায় ১০০০ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ও বিবিএ ফ্যাকাল্টির মাধ্যমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যাদের সুপারিশ আছে, তারাই এই পরীক্ষা দিতে পারেন। তাদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই প্রিলি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় যাতে আগেই নির্বাচিত করে রাখা প্রার্থীরা যেন বাদ না যায়। লিখিত পরীক্ষার বিষয়টি বিইউপি বা এমআইএসটি’র অধীনে রাখা হয় যাতে এই নিয়োগ পরীক্ষার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করতে না পারে।
নিয়োগ জালিয়াতিতে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব
সূত্র জানায়, এনএসআই নিয়োগের আগে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেগুলো হলোÑচাহিদা নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রার্থী নির্ধারণ ও নিয়োগ প্রদান। চাহিদা নির্ধারণে গুরুত্ব দেওয়া হয় ‘র’ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও নীলনকশা বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জনবল নিয়োগ।
পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়, জনপ্রশাসন থেকে জনবলের চাহিদা অনুমোদন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য সব পক্ষকে নির্দেশনা প্রদান যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক- ১২ সমন্বয় করেন। প্রার্থী নির্ধারণে যেসব কাজ করা হয় তা হলোÑ মধুর ক্যান্টিন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ভারতপন্থি কর্মকর্তাদের সুপারিশ, ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একত্রিতকরণ, চাকরির সার্কুলার প্রধান ও সুপারিশপ্রাপ্ত মনোনীত ব্যক্তিদের প্রবেশপত্র প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বশেষ যে কাজটি করা হয় তা হলো, কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে মনোনীত ব্যক্তিদের ভাইভাতে আহ্বান করা এবং মনোনীতদের থেকে সর্বশেষ চাকরির যোগদানপত্র দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ, বাজে, অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১১ সালের পর একইভাবে ২০১৪ সালে ৫৪ জন সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও ৫৩ জন যোগদান করে। এছাড়াও এই পদসহ এ সময় প্রায় ৫০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করা।
এনএসআই ডিজি (লে. জে.) শামসুল হকের আমলে আত্মীয়-স্বজন নিয়োগ
সূত্র জানায়, মেজর জেনারেল শামসুল হক এনএসআই ডিজি হওয়ার পর লে. জেনারেল হিসেবে সেনাবাহিনীর কিউএমজি (কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল) হন। এনএসআই থাকাকালীন ২০১৪ সালের আগস্টে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি ব্যাচ নিয়োগ দেন। সেখানে তিনি আগের মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। তিনি এই সুপারিশের তালিকায় নিজের আত্মীয়-স্বজনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। সরকারি চাকরির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আত্মীয়-স্বজন নিয়োগের রেকর্ড করেন তিনি। কমপক্ষে ১০০ জন আত্মীয় নিয়োগ দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) শামসুল হক।
মে. জেনারেল টিএম জোবায়েরের আমলে ব্যাপক নিয়োগ জালিয়াতি
জানা গেছে, ২০১৮ সালে মেজর জেনারেল (অব.) টি এম জোবায়েরকে এনএসআইর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। জোবায়ের মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের খুবই আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। ‘র’-এর সঙ্গে তার কানেকশন এবং অজিত দোভালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমেই। তিনি এনএসআইর ইতিহাসে কালো অধ্যায় রচনা করেন। তিনি সরাসরি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের পরামর্শে ও মদতে কাজ করতেন। তার সময়ে এনএসআইর প্রধান কার্যালয় ‘র’-এর অফিসে পরিণত হয়।
তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদতে ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন বাস্তবায়ন করেন। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অজিত দোভাল কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জনবল নিয়োগের পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী ২০২০, ২০২২, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৪০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নতুন জনবলের একটা অংশ ভারতের এজেন্ট ও ছাত্রলীগের ক্যাডার। এদের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল।
সূত্র জানায়, যে কোনো আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই তা নস্যাৎ করে দিত এনএসআই সদস্যরা। মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এনএসআইর কঠোর নজরদারির আওতায় নিয়ে আসেন। তিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেন সব ক্যাম্পাসের হল ও ফ্যাকাল্টিসহ ছাত্র-জমায়েতের প্রতিটি স্থানে এনএসআইর এজেন্ট নিয়োজিত করে।
সূত্র জানায়, এনএসআইর প্রতিটি পদে ভারতীয় এজেন্ট ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই নিয়োগ নিয়ে ছাত্র-সমন্বয়ক, উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা কাউকে অবগত করা হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে এনএসআইর কর্মকর্তা যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাদের পদচ্যুত না করে বরং ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। ২০২০, ২০২২ ও ২০২৩ সালের নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে যে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এনএসআইর প্রধান কার্যালয়ে এর প্রমাণ সংরক্ষিত আছে যা অনুসন্ধান করলে জানা যাবে।
এনএসআইর নিয়োগ কমিটির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা হলেনÑএনএসআইর পরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচয় নম্বর-বিএ-৩৬৫৯), এনএসআইর যুগ্ম-পরিচালক নাসির মাহমুদ গাজী (পরিচয় নম্বর-এ-০১৪৯) ও এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক আফজালুন নাহার (পরিচয় নম্বর- এ-০০৪৩)। এই তিনজন গণহারে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন।
সূত্র জানায়, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় জালিয়াতির মাধ্যমে এনএসআইয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করা হতো। অনেক প্রার্থী বৈধ শিক্ষা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। অবৈধ নিয়োগের মাধ্যমে যারা এনএসআইতে কর্মরত আছেন তারা ভারত ও আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত।
সূত্র জানায়, এনএসআই নিয়োগে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তারা ছাত্রলীগের ছাড়পত্রের জন্য প্রতি নিয়োগকারীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নিত। যারা টাকা দিত না তারা ছাত্রলীগের কেউ না বলে এনএসআই সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হতো।
এ বিষয়ে এনএসআইয়ের যুগ্ম-পরিচালক নাসির মাহমুদ গাজী (পরিচয় নম্বর-এ-০১৪৯) আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে ফোন করে, ‘এনএসআইয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়োগে আপনি মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন’ প্রশ্ন করা হলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমার কি নিয়োগে সেই ক্ষমতা আছে? এসব অভিযোগ বানোয়াট।’
তিনি ৫ আগস্টের পর খাগড়াছড়িতে বদলি হন। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক আফজালুন নাহার ফোন করলে তিনি প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত কণ্ঠে জানান, ‘যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন তাদের কে নিয়োগ দিয়েছে। তারা কী বলবে তখন আমাকে জানান? আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন। আরো একটি প্রশ্ন করার আগেই তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে কলটি কেটে দেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তিনি চিটাগং শাহ আমানত বিমানবন্দরে কর্মরত রয়েছেন। এনএসআইর পরিচালক কর্নেল জাকির হোসেন (পরিচয় নম্বর-বিএ-৩৬৫৯) বিষয়ে জানা গেছে, তিনি বাহিনী থেকে অবসরে গেছেন। তার ব্যক্তিগত একটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। টানা তিনদিন ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, তিনি দেশ ত্যাগ করেছেন। ধানমন্ডি ও মিরপুর ডিওএইচএসে দুটি বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তাকে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএসআইয়ে নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী আমার দেশকে জানান, ‘তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ছিলেন। সব সুপারিশের পরও তার ছাত্রলীগের এক নেতাকে ৭ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
জোবায়েরের স্বর্ণ চোরাচালান ও ‘র’ পৃষ্ঠপোষকতা
সুদর্শন কুমার ভৌমিক যুগ্ম পরিচালক হিসেবে এনএসআইয়ে ২০১২ সালে যোগদান করেন। তিনি চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বর্তমান কাউন্টার ইনটেলিজেন্সে কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ রাখেন। তাকে গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাসুদুর রহমান ২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি আ.জ.ম নাছিরের বাসায় থাকতেন। তিনি এনএসআই সচিবালয়ে কর্মরত।
মো. আশিকুর রহমান যুগ্ম পরিচালক হিসেবে এন্ট্রি ট্রাফিকিং শাখায় যোগদান করেন। ছাত্রলীগ করা এই আশিকুর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন। তার বাবা মতিউর রহমান এনএসআইর জনবল কাঠামোতে আত্মীকৃত হন। পরে তার বাবা সহকারী পরিচালক হন এবং অবসরে যান।
ডেপুটেশনে আসা মেজর (অব.) রায়হানকে চড় মারার কারণে প্রধান কার্যালয় কারিগরি শাখা থেকে মোহাম্মদ আশিকুর রহমানকে পঞ্চগড় জেলায় বদলি করা হয়। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে সেই সুযোগকে কাজে লাগান। ২০১৮ সালের তৎকালীন জেলা কর্মকর্তা উপ-পরিচালক পরে যুগ্ম-পরিচালক গানিউল ইসলামকে বিএনপিপন্থি ট্যাগ দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার বর্তমান যুগ্ম পরিচালক আশিকুর রহমান লাইম লাইটে চলে আসেন। ২০১৮ সালে রাতের ভোটের সময় পঞ্চগড় জেলায় এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে ভোট জালিয়াতি ও দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি পঞ্চগড়ে অন্যতম কুশীলবে পরিচিত হন।
এ ঘটনায় ডিজি মেজর টিএম জোবায়েরের দৃষ্টিতে আসেন এবং আস্থাভাজনে পরিণত হন। জুবায়ের আশিককে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বদলি করেন। আশিকের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জুবায়ের তার স্বর্ণ চোরাচালানে মানিলন্ডারিং নিজ ভায়রাভাই কাইয়ুমকে দিয়ে করাতেন। কাইয়ুম বিমানবন্দর ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে প্রাধিকারপ্রাপ্ত না হলেও এনএসআইর সাবেক ডিজি জুবায়েরের ভায়রাভাই হিসেবে এনএসআই প্রটোকল নিয়ে যাতায়াত করেন। কাইয়ুমের এই যাতায়াতের সব ব্যবস্থা আশিক করতেন। এ সময় মালামালের কোনো স্ক্যানিং হতো না। এ কারণে উপ-পরিচালক আশিক যুগ্ম-পরিচালক পদে দ্রুতই পদোন্নতি পান। তাকে প্রধান কার্যালয়ে এন্ট্রি ট্রাফিকিং শাখায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই শাখায় কর্মরত অবস্থায় টিএম জোবায়ের ১৪টি সুটকেস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আশিকের উপস্থিতিতে কোনো স্ক্যানিং ছাড়াই পার করে দেন। সুটকেসগুলো সিঙ্গাপুরে যায়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করা আশিক কোটা সংস্কারের বিরোধী ছিলেন। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর আশিককে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। কিন্তু দুই দফায় তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিস্টের দোসর আশিক অজানা রহস্যে এনএসআইর প্রধান কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন।
২০১২ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
ইকবাল হোসেন (যুগ্ম পরিচালক) ও সাজুহা ইসলাম (উপপরিচালক), এইচটি ইমামের আত্মীয়। প্রদীপ কুমার অধিকারী (উপপরিচালক), ‘র’-এর অনুগত ও এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক বিপ্লবী রানীর আত্মীয়। নাছির উদ্দিন (যুগ্মপরিচালক), সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও দিপু মনির আত্মীয়। সামিনা সুলতানা (যুগ্মপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জুবায়েরের আত্মীয়। মো. জাকির হোসেন (যুগ্মপরিচালক), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। ইয়াসিন সুহাইল (উপপরিচালক), পুলিশের সাবেক ডিআইজি ও এনএসআইয়ের ডাইরেক্টর ইন্টারনাল শফিকুল ইসলামের ভাতিজা। এইচএম ফয়সাল আহমেদ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। মো. রুবেল আলম (উপপরিচালক), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মাসুদ আলমের ভাই। রাসেল জমাদার (যুগ্মপরিচালক), আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সোবহান গোলাপের ভাতিজা। আতিকা খানম (যুগ্মপরিচালক), মহসিন হলের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী। মো. আশিকুর রহমান (যুগ্মপরিচালক), এনএসআই কর্মকর্তার ছেলে। তৈয়বুল মাওলা (যুবলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারের সুপারিশে চাকরি)। মো. আল আমিন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ গবেষকবিষয়ক সম্পাদক। মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের নেতা। মো. আশরাফুল ইসলাম, (যুগ্মপরিচালক), এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমানের ভাগিনা। ফরহাদ হোসেন (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. আবদুল্লাহ আল মারুফ (যুগ্মপরিচালক), বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। আফরোজা আনজুম ফেন্সী (উপপরিচালক), স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি। মো. ওয়াসীম উদ্দীন (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
শারমিন আক্তা রুপা (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ব্রি. জে. (অব.) এম মনজুর আহমদের সুপারিশে চাকরি। এস কে সাইলক হোসেন (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক। কেএম আরিফ হোসেন (যুগ্মপরিচালক), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। সাইফ আহমেদ শাকিল (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (যুগ্মপরিচালক), মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। মো. ফয়েজ উদ্দিন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। মো. আল আমিন চৌধুরী (যুগ্মপরিচালক), জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. সাইফুল ইসলাম (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসম্পাদক। দেওয়ান মনোয়ার হোসেন (উপপরিচালক), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক। মো. নাজমুল হক (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। শেখ শাফিনুল হক (যুগ্মপরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আখি আখতার (উপপরিচালক), মেজর ফয়সালের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মো. রেজাউল করিম (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিকল্পনা সম্পাদক। সাইদ মাহমুদ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মুন্সী তানিয়া আফসার (উপপরিচালক), স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শরীফুল ইসলাম (যুগ্মপরিচালক), শেখ সেলিমের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। সাইফুল ইসলাম (উপপরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। মো. খালিদ হাসান (উপপরিচালক), পিতা ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান। বদরুল আহমেদ (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. মেরাজুল ইসলাম (উপপরিচালক), জসীম উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের নির্বাহী সদস্য। লতিফা পারভীন (যুগ্মপরিচালক), ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়া (উপপরিচালক), ইডেন ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক। মো. আজিজুর রহমান (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। দেবব্রত দাশ (উপপরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপ্রচার সম্পাদক। সুরভী শারমিন (উপপরিচালক), পিতা শেখ মুজিবর রহমানের ড্রাইভার ছিলেন। রাশেদ হাসান (উপপরিচালক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
২০১৪ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
মো. আব্দুল বাতেন (উপপরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. তাহাজ্জত হোসেন (উপপরিচালক), এনএসআই অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমানের আত্মীয়। লতিফা আহমেদ (উপপরিচালক), কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের বোন। শেখ মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম (উপপরিচালক), বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসম্পাদক। প্রলয় সরকার (উপপরিচালক), এনএসআই-এর অতিরিক্ত পরিচালক অসিত বরণ সরকারের আত্মীয়। নির্ঝর আলম (উপপরিচালক), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ড. ফখরুল ইসলাম (উপপরিচালক), আওয়ামী লীগ নেতা ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছেলে। আমিনুল হক পলাশ (উপপরিচালক), বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। মো. শওকত ইসলাম (উপপরিচালক), মহসীন হলের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজবাহ উদ্দিন (উপপরিচালক), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. এলাহী মঞ্জুর (উপপরিচালক), জিয়া হলের ছাত্রলীগের সহসভাপতি। রেফায়েত উল্লাহ (উপপরিচালক), স্যার এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। নিশাত ফারদিন (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ও পলাতক মেজর টিএম জুবায়েরের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। আনিসুজ্জামান (উপপরিচালক), সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের ভাতিজা। কামরুল হাসান (উপপরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। মো. এবি সিদ্দিকী রাহাত (উপপরিচালক), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. রফিকুল ইসলাম (উপপরিচালক), এসএম হল ছাত্রলীগের নেতা। রাহমাত নাওয়াজ ফাহমী (উপপরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক।
২০১৬ ও ২০১৭ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
নাহারীন চৌধুরী (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের সুপারিশে চাকরি। শেখ মাহাবুব মোর্শেদ (উপপরিচালক), মামা এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. বশির উদ্দিন। মো. ফজলে রাব্বী (উপপরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি লে. জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। ফয়সাল মিয়া (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। আতিফ ইয়াসির (উপপরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আবু সাদাত মো. ফজলুল হক (উপপরিচালক), সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আত্মীয়। শামীম আহমেদ (উপপরিচালক), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২ আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের ভাই। মো. আদনান (উপপরিচালক), পিতা গোপালগঞ্জ শ্রমিক লীগের সভাপতি। সম্রাট আকাহিতু (উপপরিচালক), শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। মো. অনিক কামাল (উপপরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। তানভীর আহমেদ খান (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। লুৎফুন্নাহার লুৎফা (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। মিলি আক্তার (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ে অতিরিক্ত পরিচালক মনসুর আহমেদের ভাতিজি। কায়সার বরকত (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়। মো. ইমতিয়াজ হক (উপপরিচালক), সাবেক এনএসআইয়ের ডিজি জেনারেল শামসুল হকের আত্মীয়।
২০২০ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
মো. মাহদী হাসান (সহকারী পরিচালক), শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. মঞ্জুর এ খোদা (সহকারী পরিচালক), পিতা সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। আজমেরী জাহান (সহকারী পরিচালক), সাবেক ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার রাকিব উল্লাহের ভাতিজি। মুজিবর রহমান (সহকারী পরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মীয়। নাজনীন জাহান (সহকারী পরিচালক), আওয়ামীপন্থি শিক্ষক এমরান কবির চৌধুরীর আত্মীয়। মোহাম্মদ রিফাতুল হক (সহকারী পরিচালক), বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আত্মীয়। ফারিয়া জামান মিশিতা (সহকারী পরিচালক), সাবেক এসএসএফের ডিজি জেনারেল মুজিবের ভাতিজি। মো. শামীম হোসেন (সহকারী পরিচালক), সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এসকে সাব্বির হোসেন (সহকারী পরিচালক), শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য। আশিক ইকবাল (সহকারী পরিচালক), বুটেক্স শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক। শাশ্বত মুজিব অরোরা (সহকারী পরিচালক), সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাতি। শারমিন আকতার (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামী লীগ নেতা ও চাচা আওয়ামী লীগের এমপি। রাজীব হোসেন (সহকারী পরিচালক), সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. সাইফুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পলাতক তারিক সিদ্দিক আহমেদের সুপারিশপ্রাপ্ত। শাহেদা আলী (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের উপপরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী। মো. আসাদুজ্জামান মিয়া (সহকারী পরিচালক), কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মো. তানভীর আহমেদ নাঈম (সহকারী পরিচালক), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. আল আমিন সরকার (সহকারী পরিচালক), সাবেক সেনাপ্রধান ও পলাতক জেনারেল আজিজের চাচাতো ভাই। অনিক দাস (সহকারী পরিচালক), জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। শামীম (সহকারী পরিচালক), বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
২০২২ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
শরফুদ্দিন আহমেদ খান (সহকারী পরিচালক), কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। মো. আশরাফুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাবরিনা মনজুর (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল টিএম জুবায়েরের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়। শেখ আলিফ উদ্দিন (সহকারী পরিচালক), শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সদস্য। আবিদা তাসকীন ঐশী (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক ডিএম ইউসুফ। এসএম শাহরিয়ার জামান (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামীপন্থি সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুজ্জামান। হাসান আহমেদ শোভন (সহকারী পরিচালক), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি জামাই। নীলাঞ্জনা পুরাকায়স্থ (সহকারী পরিচালক), ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। সামী ইকবাল (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের কর্মকর্তা আবদুস সামাদ সরকার। শেখ আব্দুর রহমান (সহকারী পরিচালক), এএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। আব্দুল্লাহ হাসান রাকিব (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সাবেক যুগ্মপরিচালক। আব্দুল্লাহ আল নোমান (সহকারী পরিচালক), আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। আকিব আল নোমান (সহকারী পরিচালক), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। তাহমিদা খাতুন চাদনী (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জুবায়েরের আত্মীয়। কাকুলী আক্তার (সহকারী পরিচালক), বাহাউদ্দিন নাসিমের ভাতিজি। সাদমান সাকিব হাসান (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামী লীগ নেতা ও চাচা খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য। মো. তানভীর হোসেন (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক মো. আকরাম হোসেন। মো. শরীফুল ইসলাম তালুকদার (সহকারী পরিচালক), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। মো. মাসনুন হক মাহি (সহকারী পরিচালক), পিতা আওয়ামীপন্থি সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোজাম্মেল হক। ফারাহ হাবীব (সহকারী পরিচালক), পিতা এনএসআইয়ের যুগ্মপরিচালক হাবিবুর রহমান। গাজী আহানাফ সাকিব (সহকারী পরিচালক), মাতা আফরোজা বিনতে মনসুর শেখ হাসিনার এসাইনমেন্ট অফিসার ছিলেন। নাজমুন নাহার তিথি (সহকারী পরিচালক), নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। তাহসীনা নাহলীন খান (সহকারী পরিচালক), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাতিজি। মো. রাসেল মুন্সী (সহকারী পরিচালক), গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। আদনান আরেফিন প্রীতম (সহকারী পরিচালক), সাবেক এসএসএফের সাবেক ডিজি পলাতক জেনারেল মুজিবুর রহমানের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মো. ফরহাদ পারভেজ (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
২০২৩ ব্যাচের নিয়োগে ‘র’ ও আওয়ামীকরণ
ফারহা ফয়েজ (সহকারী পরিচালক), পিতা সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মো. খায়রুল ইসলাম (সহকারী পরিচালক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। মো. মুফাসসীর রশীদ (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং সাবেক ডিজি টিএম জোবায়েরের আত্মীয়। নোশিন নওয়াল (সহকারী পরিচালক), মাতা শাহনাজ সুলতানা এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক। নিফাত ইসলাম (সহকারী পরিচালক), সাবেক ডিরেক্টর এডমিন কর্নেল জাকির হোসেনের সুপারিশে চাকরিপ্রাপ্ত। মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস (সহকারী পরিচালক), পিতা মো. নূর আলম যাদু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এম তানভীর হোসেন (সহকারী পরিচালক), পিতা র্যাবের সাবেক ডিজি ও পলাতক এম খুরশীদ হোসেন। মো. ইমতিয়াজ রহমান (সহকারী পরিচালক), এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি ও পলাতক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম মনজুর আহমেদের শালা।