Image description

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলা একযোগে বোমা হামলায় প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। মূলত নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন হামলাটি চালিয়েছিল। ওই হামলায় বহু মানুষ নিহত-আহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে প্রায় ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার মধ্যে কয়েকটি মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত।

ঘটনার বিবরণী থেকে জানা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে ওই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। এতে দুই জন নিহত এবং দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সে দিন দেশের মোট ৪৫০টি স্থানে পাঁচ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি’র সদস্যরা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্ক। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে সারা দেশের মানুষ। এরপর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ওই ঘটনার পর দায়ের করা হয়েছিল প্রায় ১৫৯টি মামলা। যার মধ্যে শতাধিক মামলা অধস্তন আদালতে বিচারকাজ শেষ হয়ে গড়িয়েছিল উচ্চ আদালত হাইকোর্ট পর্যন্ত। এরপর সেখানেও বিচার কার্যক্রম শেষে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শিশির মনির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে মামলাগুলো বিচারিক আদালতে দায়ের হয়েছিল তার মধ্যে অসংখ্য মামলায় হাইকোর্টের শুনানি হয়েছে। রায়ও হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের পর কিছু মামলা নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে অপেক্ষমাণ আছে। তবে সেসব মামলার সংখ্যা কত, তা জানা নেই।’ 

জানা গেছে, বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে দায়ের হওয়া ১৫৯টি মামলার মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছিল ২৪২ জনকে। তবে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছিল ১ হাজার ১২১ জনকে।

অধস্তন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শেষে প্রায় শতাধিক মামলার মধ্যে ৩৫০ জনের বেশি আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়াও বিচারিক আদালত থেকে প্রায় ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি এবং প্রায় ৩৫৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে হাইকোর্ট এবং পরে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

তবে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় বোমা হামলাকারী ইফতেখার হোসেন মামুন, জেলা জজ আদালতের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আব্দুল মান্নান ও দুধ বিক্রেতা বাদশা মিয়া আহত হন। ওই ঘটনার মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। এরপর সে রায় সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকায় ছয় আসামির ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। ফলে এ মামলায় রায় কার্যকর হওয়ায় ১৭ আগস্টের বোমা হামলার মামলা থেকে বাদ পড়েন ঘৃণিত এই ছয় জঙ্গী। 

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় শতাধিক মামলার রায় দিয়েছে অধস্তন আদালত। তার মধ্যে কিছু মামলা হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। মামলার পক্ষগুলো উদ্দ্যোগ না নিলে পর্যায়ক্রমেই সেসব মামলার শুনানি শেষ হবে।