Image description

দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে, বিশেষ করে আসিয়ান চেয়ার হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় ৩ দিনের সফরে যান বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় দেশটির জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ানে নেতৃত্বের অবস্থান মালয়েশিয়াকে একটি অনন্য অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। যার ফলে দেশটি আঞ্চলিকভাবে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা আশা করছি মালয়েশিয়া এই আলোচনায় তার প্রভাব ব্যবহার করবে, যাতে আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারি। 

ড. ইউনূস আরও সতর্ক করে বারনামাকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে শরণার্থী সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে নতুন করে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আগে থেকেই অবস্থান নেয়া ১২ লাখের অতিরিক্ত শরণার্থীসহ গত ১৮ মাসেই নতুন করে ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। ফলে এ সমস্যা ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সমস্ত তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল সমস্যা। 

প্রধান উপদেষ্টা আরো জানান, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজতে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে। প্রথমটি হবে এ মাসের শেষে কক্সবাজারে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দায়িত্বভার গ্রহণের অষ্টম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে। আর তৃতীয়টি বছরের শেষে দোহা, কাতারে হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বারনামা লিখেছে, ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা খুব একটা অগ্রগতি লাভ করেনি। দীর্ঘায়িত এই মানবিক সংকট কেবল বাংলাদেশকেই নয়, বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রকেও প্রভাবিত করছে। মালয়েশিয়া যদিও ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী নয়, তবুও মানবিক ভিত্তিতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের ফলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। 

অধ্যাপক ইউনূস এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকারে তিনি চটজলদি জবাব দেন, এটা (সরকারপ্রধানের পদে বসা) কখনোই তার নিজের জন্য নয়, বরং দেশের জনগণের জন্য। তার ভাষায়- এটা আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তারা যেভাবে চলতে চান, আমি শুধু তাদের সেভাবে চলতে সহায়তা করছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ থেকে ১৩ই আগস্ট অধ্যাপক ইউনূস দেশটি সফর করেন। সফরের শেষদিকে তার সাক্ষাৎকারটি নেন বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজ। সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারাম। একজন নেতার চেয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একজন অভিভাবক হিসেবেই বর্তমানে নিজের ভূমিকা তুলে ধরতে চান অধ্যাপক ইউনূস। নিজের সামনে থাকা বিশাল চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়েও তিনি অকপটে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখানে অসুবিধা অনেক। অনেকেই এটাকে ব্যাহত করতে চায়। কেননা, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক উপাদানগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।