Image description
 

রংপুর জেলার তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে জামাতা ও শ্বশুর নিহতের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও ছয় পুলিশকে তারাগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

 

এ হত্যার ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জুবায়ের ও রংপুর পুলিশ লাইনস থেকে যুক্ত থাকা এস আই শফিকুল ইসলামকে এ থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা হলেন ধীরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন, বাবুল চন্দ্র রায় ও ফারিকিত আখতার।

 

৯ আগস্ট উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকায় চোর সন্দেহে রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে গণপিটুনি দেওয়ার সময় খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধারে গিয়েও জনতার হাতে রেখে ফেরত আসেন।

 

বর্তমানে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই আবু জুবায়ের।

 

রংপুরের পুলিশ সুপার আবু হোসাইন এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

 

শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা নামক স্থানে ভ্যান চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়। নিহতরা হলেন, কুশা ইউনিয়নের বেলতলী ডাঙ্গাপাড়া এলাকার রূপনাল দাস (৪১) ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। তারা সম্পর্কে শ্বশুর ও ভাগ্নি জামাই।

 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি রূপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে ঠিক হয় রংপুরের মিঠাপুকুর শ্যামপুরের লালচাঁদ দাস ওরফে ডিপজলের সঙ্গে। রোববার হবু কনে নুপুর দাসকে আশীর্বাদ করার জন্য জামাইয়ের পক্ষে লোকজন আসার কথা ছিল। এজন্য শনিবার সন্ধ্যায় ভাগ্নি জামাই প্রদীপকে সঙ্গে নিয়ে তার ভ্যানে বুড়িরহাট বাজারে যান রূপলাল। বাজার শেষে ভাগ্নি জামাই প্রদীপের সঙ্গে তার ভ্যানে করে ফেরার সময় বুড়িরহাট বাজার এলাকার বটতলী নামক স্থানে পৌঁছালে ওই এলাকার আলামিন সহ স্থানীয় কয়েকজন তাদের চোর সন্দেহে আটক করে। এ সময় জামাই ও শ্বশুরকে ভ্যানচোর সন্দেহে মারধর করতে করতে বুড়িরহাট বাজারে নিয়ে আসলে বাজারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে দুজনকেই গণপিটুনি দেন। এতে দুজনেই গুরুত্ব আহত হন

 

খবর পেয়ে ক্যাম্পের সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেন। হাসপাতালের চিকিৎসক রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুত্বর আহত প্রদীপকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে তিনি মারা যান।

 

এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে রোববার রাত ৮ থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বেলতলি নামকস্থানে অবরোধ করে রাখেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা

খবর পেয়ে ইউএনও রুবেল রানাথানার ওসি এম এ ফারুক হোসেন ও উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের পরিবারের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। পরে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।

 

 

 

 

তারাগঞ্জ থানার ওসি এ ফারুক হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজনকে হত্যার ঘটনায় রূপলালের স্ত্রী একটি হত্যা মামলা করেছেন। দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।