Image description
♦ শুধু তিতাসের কাছেই ১ হাজারের বেশি আবেদন জমা ♦ তিন ক্যাটাগরিতে সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের ♦ নতুন অনেক কারখানা উৎপাদনেই যেতে পারছে না ♦ ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাত, তৈরি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান

শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগ না পাওয়ায় শত শত কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। ব্যাংক লোন নিয়ে কারখানা তৈরি করলেও উৎপাদনে যেতে না পারায় নানামুখী সমস্যায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, নতুন শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য অসংখ্য আবেদন গ্যাস কোম্পানিগুলোতে জমা পড়ে আছে। শিল্পের মালিকরা টাকাও জমা দিয়েছেন, কিন্তু সংযোগ পাচ্ছেন না। শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেক কারখানা। গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ দিয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি ব্যয়ে কারখানার উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে। আবার খরচ কমাতে অনেক কারখানা প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। এতে কর্মসংস্থানও কম হচ্ছে। নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য অনেক কারখানা মালিক টাকা জমা দিয়েছেন। পেয়েছেন ডিমান্ড নোটও (চাহিদাপত্র)। এর মধ্যে কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো তাঁরা সংযোগ পাননি। বিদ্যুৎ দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচে কেউ কেউ হয়ে পড়ছেন ঋণগ্রস্ত। কেউ কেউ উৎপাদন লসে (বিদ্যুৎ দিয়ে উৎপাদনের জন্য লোডশেডিংয়ের কারণে পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়)। সব মিলে শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগ না পাওয়ায় এখন ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

শিল্পমালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক শিল্পমালিক বছরের পর বছর ডিমান্ড নোট পেয়েও এখনো সংযোগ পাচ্ছেন না। ভারী শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রয়োজন, যা গ্যাস ছাড়া সম্ভব নয়। সংযোগ না থাকায় নতুন করে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। নতুনদের ক্ষেত্রে যারা অবকাঠামো গড়ে তুলে সংযোগ পাচ্ছেন না তাদের অবস্থা ক্রমেই রুগ্ণ হচ্ছে। নতুন করে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। আবার অনেক পণ্য দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এতে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। শিল্পে নতুন সংযোগের জন্য দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধু তিতাসের কাছেই নতুন-পুরান মিলে গ্যাস সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে ৪০০-এর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিশ্রুত সংযোগের অপেক্ষায় আছেন। এ গ্রাহকরা গ্যাস সংযোগের জন্য টাকাও জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ নতুন কারখানায় সংযোগের আবেদনের পাশাপাশি কেউ কারখানা সম্প্রসারণ আর কেউ লোড বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন। সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১৩ এপ্রিল নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। শিল্পমালিকদের আপত্তির পরও গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পে সরবরাহ বাড়ানো হবে বলা হয়। কিন্তু এ সময়ে নতুন কোনো সংযোগ দেওয়া হয়নি। জানুয়ারি থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিশ্রুত সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকারে আছে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত যাঁরা ডিমান্ড নোট পেয়েছেন তাঁদের প্রতিশ্রুত গ্রাহকের তালিকায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্পে যাচ্ছে ১২০ কোটি ঘনফুট। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কর্মকর্তারা জানান, শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে তিন ক্যাটাগরিতে। এর একটি হচ্ছে যেসব শিল্পকারখানায় তিন দিনের মধ্যেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত যেখানে তিন মাসের মধ্যে সংযোগ দেওয়া যাবে আর তৃতীয়ত আগামী ছয় মাসের মধ্যে যেসব শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, ‘শিল্পে গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন করে একটি ধারা যোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন সংযোগ দেওয়া বা লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিতরণকারী কোম্পানিকে অবশ্যই গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ শিল্পে গ্যাসের দাম বেশি। শিল্পে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আমাদেরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এদের মধ্যে যেসব কারখানায় এখনই অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া যাবে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা মিলে একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি সশরীরে গিয়ে এসব কারখানা পরিদর্শন করছে। এর মধ্যে জালালাবাদ, কর্ণফুলী ও বাখরাবাদে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য এ পরিদর্শন শেষ হয়েছে। তিতাসের ক্ষেত্রেও এ পরিদর্শন শিগগিরই শেষ হবে। আর এটি শেষ হলেই এ পর্যায়ে আমাদের সংযোগ দেওয়া হবে। সশরীরে গিয়ে কারখানাগুলো পরিদর্শন করার কারণে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই।’