Image description
মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সিরিজ বৈঠক, আসছে ইউরোপের প্রতিনিধিদল, তৎপরতা কানাডা অস্ট্রেলিয়ার দূতদেরও

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। জনগণের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পৌঁছে দিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো।

সরকার ও রাজনৈতিক দল ছাড়াও নির্বাচন ঘিরে তৎপরতা বাড়িয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশন ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে তীক্ষè নজর রাখবে বিদেশি মিশনগুলো।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁদের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নির্বাচনি রূপরেখা ও সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এরপর বাংলাদেশে ফিরে ২২ জুলাই মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ বৈঠকে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

গত সোমবার গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বৈঠক করতে যান আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচন, গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। সবশেষ মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে তাঁর বাসভবনে যান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ বৈঠকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তুতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় সনদসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপের অগ্রগতি ও পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। ৪ আগস্ট এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইইউর একটি প্রি-ইলেকশন অবজারভার টিম সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় আসবে। সাত সদস্যের এ দলে তিনজন বিদেশি ও চারজন স্থানীয় পর্যবেক্ষক থাকবেন।’

এর আগে ১৬ মার্চ ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে ইইউ।’ এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইলি। এ সময় নির্বাচনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সহায়তার ঘোষণা দেয় কানাডা এবং ব্যালট প্রকল্পে ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয় অস্ট্রেলিয়া। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা দি অপজিশন ইন্টারন্যাশনাল এবং এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল)। বৈঠককালে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে আনফ্রেল। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে দি অপজিশন ইন্টারন্যাশনাল ।

ভোটের আয়োজনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিদেশিদের তৎপরতা তত বাড়ছে। বাংলাদেশের ইতঃপূর্বের নির্বাচনগুলোতেও একই রকম অবস্থা দেখা গেছে। তবে বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কূটনীতিকদের তৎপরতা ছিল খুবই শীতল। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশনগুলো আমাদের অংশীদার। বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাক, স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকুক এগুলো খুবই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সে প্রত্যাশার আলোকেই বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচনের সময় তৎপর হয়ে ওঠেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে তাঁরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন কি না তা-ও বিবেচনা করেন। আমরাও চাই বিদেশিরা আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক।’