
সাদাপাথর লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। গতকাল দুপুরে দুদকের একটি টিম টানা দুই ঘণ্টা সাদাপাথর এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা সাদাপাথর লুটের একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করেন।
পরিদর্শন শেষে ৯ সদস্যবিশিষ্ট দুদক দলের প্রধান সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব বলেন, যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করা এবং তদন্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে বলে। তিনি জানান, এ ধরনের নির্বিচারে লুটপাটের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের দায় বেশি। পর্যটন খাতের এ ধরনের ক্ষতি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কিনা সে ব্যাপারেও দুদক খোঁজ নিচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথরের ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ।
তিনি গণমাধ্যকে জানান, ‘সাদাপাথরের পাথর ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় মঙ্গলবার এ কমিটি গঠন করা হয়। লুটপাটের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাদাপাথরে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে এটি তদন্তের জন্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী রোববারের ভেতরে তাদের রিপোর্ট জমা দিবে।’ জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সিলেটের সাদাপাথরে আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। আমাদের ব্যাকআপ যেগুলো রয়েছে যেমন, ক্রাশার মিল অপসারণ, ক্রাশার মিল থেকে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের কার্যক্রমের বিষয়ে দেখা গেছে, এক জায়গায় কিছুটা বিচ্যুতি ঘটলেও অন্য জায়গায় আমাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই চলছে লাগামহীন লুটপাট। প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনেই লুটে নেয়া হয় সাদাপাথরের পাথর। এরপর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ ছিল লুটপাট। তবে গত মাসের শেষ দিকে লুটপাটও আরও বেড়ে যায়। ওই সময়ে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ঢলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাথরও নেমে আসে। এরপর থেকে হাজারও শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন চলে লুটপাট। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে লুটের পাথর নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার পর্যন্ত এই লুটপাট চলে। তবে দেশ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণে মঙ্গলবার সাদাপাথরে গিয়ে পাথর তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। যদিও গত ১৫ দিনেই একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে সাদাপাথরকে। এই সময়ে কয়েকশত কোটি টাকার পাথর লুটে নেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কেবল পাথর নয়, নদীতীরের বালিও মাটি খুঁড়েও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।