Image description
♦ ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে : সালাহউদ্দিন আহমেদ ♦ বিভিন্ন অপচেষ্টা চলমান এ নিয়ে সন্দেহ নেই : মোস্তফা জামাল হায়দার ♦ তারিখ ঘোষণা হলেও নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। গতকাল মালয়েশিয়াতেও তিনি তা বলেছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তারপরও নির্বাচন ঠেকাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত কয়েক দিন ধরে সমাবেশগুলোতে সতর্ক থাকার জন্য দলীয় কর্মীদের আহ্বান জনিয়েছেন। এদিকে এনসিপি ঘোষণা দিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে সব সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জরিপের নামে নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। সব তথ্যই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পক্ষে। যারা জরিপ পরিচালনা করছেন তারা অনেকেই পরিচিত আবার কিছু কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে অথচ ঐকমত্য কমিশন সংস্কার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ন্যূনতম সমঝোতায় পৌঁছেছে। ঐকমত্য কমিশনে আরও কিছু কাজ অবশিষ্ট থাকায় কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় একদিকে বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে তৎপরতা শুরু করেছেন, অন্যদিকে যারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাচ্ছে না তারাও তাদের মতো করে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সরকারের ভিতরেও একটি অংশ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু, চাকসু, রাকসু নির্বাচন সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে জাতীয় নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, লন্ডন বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হলো তা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। এর পর থেকেই ষড়যন্ত্র, শুরু হলো সংঘাত, রক্তপাত। বিভিন্ন কায়দায় ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি মহল দেখাতে চায়, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সবকিছুর পেছনে ওই একটি কারণ। তা হলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলমান এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তারেক রহমানের সঙ্গে দুই দিন আগেও বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে তাকে বেশ আশাবাদী দেখা গেছে। তবে গত দুই দিন আবার বিএনপির সমাবেশে তিনি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। এটি অমূলক কিছু না। বিভিন্ন অমীমাংমিত বিষয় রয়েছে এগুলো অস্বীকার করা যায় না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষের দলগুলো বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাদের সন্দেহ, হামলা-সংঘর্ষের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি এবং দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারও নির্বাচন ঠেকানোর নীলনকশার অংশ। তারা বলছেন, একটি মহলের ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের পরিকল্পনা আছে। এরই অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা চলছে।

কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা গেলে দেশে তাদের এক ধরনের কর্তৃত্ব থাকবে। নির্বাচন হলে তারা হয়তো ক্ষমতায় যেতে পারবে না- এমনটি ভেবে বিএনপিকে ঠেকানোর অংশ হিসেবে নানা ঘটনার পরিকল্পনা করছে তারা। এ কাজে নতুন একটি দলকে তারা ব্যবহার করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচন ঠেকানো। কারণ নির্বাচন ছাড়াই যারা ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর তাদের সেই ক্ষমতা না-ও থাকতে পারে।

তারা বলছেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বিঘ্নিত করতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে মহলটি পরিকল্পিতভাবে মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা এবং নির্লিপ্ততা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শুধু কথাই বলছেন কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাচ্ছে।