Image description

রংপুরে মব সৃষ্টি করে মুচি সম্প্রদায়ের দু’জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চলছে কড়া সমালোচনা। থানা থেকে মাত্র সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে ঘটনাস্থল হলেও পুলিশ গণপিটুনির শিকার রূপলাল ও প্রদীপকে রক্ষা করতে পারেনি। হাতজোড় করে রূপলাল ও প্রদীপ চোর নয় বললেও মব সৃষ্টিকারীদের মন গলেনি। গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তারা। তবে পুলিশ বলছে, মব সৃষ্টিকারী প্রায় ৪ হাজার হওয়ায় তাদের ভিড়ে চার পুলিশের পক্ষে রূপলাল ও প্রদীপকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে রূপলাল ও প্রদীপ হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়া ৪ আসামির রিমান্ড আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, রূপলাল ও প্রদীপকে বিক্ষুব্ধরা মারপিট করলে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী সদস্যদের নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ততক্ষণে রূপলাল মারা যায় এবং প্রদীপকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। থানা থেকে ঘটনাস্থলে আসতে মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিট লাগে। যে পুলিশ রূপলাল ও প্রদীপকে উদ্ধার না করে চলে গেছে তারা দ্রুত থানায় গিয়ে বাড়তি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে পারতো। এটি হলে রূপলাল ও প্রদীপের মৃত্যু হতো না। তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, ঘটনা ঘটার সময় চারজন পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে মব সৃষ্টিকারী তিন থেকে চার হাজার ছিল। তাই চারজন পুলিশের পক্ষে রূপলাল ও প্রদীপকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 
স্থানীয়রা জানায়, গত ২৮শে জুলাই বাবার ভ্যান চালাতে গিয়ে বাড়ি ফিরে আসেনি সয়ার ইউনিয়নের চালচারলিয়া বুড়িরহাট এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে আরমান হোসেন বাবু (১৬)। 

পরের দিন ২৯শে জুলাই সকালে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বুড়াপীরের ডাঙ্গা নামক এলাকা থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ছিনতাইকারীরা আরমানকে হত্যা করে তার ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী চোর ধরতে রাত জেগে এলাকা পাহারা দিতে শুরু করে। এদিকে মুচি সম্প্রদায়ের বিয়ের উৎসবে বাংলা মদ পরিবেশের রীতি রয়েছে। ৯ই আগস্ট রাতে তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের রূপলাল ও তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ সৈয়দপুর থেকে বাংলা মদ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাটে আসলে তাদের ভ্যান থামিয়ে কিছু যুবক মদের ব্যাগ কেড়ে নেয় এবং চোর চোর বলে চিৎকার করে। এ সময় স্থানীয়দের গণপিটুনিতে রূপলালের মৃত্যু হয়। পরে ১০ই আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত প্রদীপ মারা যান। এ ঘটনায় রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫শ’ থেকে ৭শ’ জন অজ্ঞাতকে আসামি করে তারাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১১ই আগস্ট সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।