
খুলনায় আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট ঘিরে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। শহরের অদূরে খালিশপুর থেকে শুরু করে ফুলবাড়িগেট এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছে। নিজেদেরে অস্তিত্ব জানান দিতে এ কাজ করলেও জনমনে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। এদিকে পোস্টারিং করার নেপথ্যে ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন মহল অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পলায়নের পর সারাদেশের ন্যায় খুলনার দলীয় নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হন। খুলনার স্থানীয় নেতাকর্মীরা সুযোগ বুঝে অনেকে দেশ ছেড়েছেন। সেখান থেকে অর্থায়ন করেই মূলত সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এরপর সবশেষ গত ২০ এপ্রিল খুলনার জিরোপয়েন্ট মোড়ে আওয়ামী লীগের কিছু লোক ঝটিকা মিছিল করে।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাতের কোনো একসময় খালিশপুর বানৌজা তিতুমীর মেইন গেটের আনুমানিক ৩০০ মিটার পশ্চিম দিকে ২ নং নেভিগেটসহ খালিশপুর থানাধীন বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ও দেয়ালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার পক্ষে "জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৫০তম শাহাদত বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি" লেখা সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা তা ছিঁড়ে ফেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এই পোষ্টার গুলোকে বা কারা লাগিয়েছে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনিদৃষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিষয়টি অনুসন্ধানের পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাতের আধারে দূর থেকে লোক এনে এই পোষ্টার লাগানো হয়েছে। এর পিছনে অনেক বড় অর্থায়ন করছে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকটি চক্র। তার মধ্যে অন্যতম হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের মালিক মাহাবুবুর রহমান। মাহাবুবুর রহমান আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ঠিকাদারি কাজে দুর্নীতির করে কোটি কোটি টাকা নজিরবিহীনভাবে লুটপাট করেছে। রাতের আধারে খুলনার বাইরে থেকে পোস্টার ছাপিয়ে এনে বিভিন্ন দেয়ালে তা লাগাচ্ছে মাহাবুব ব্রাদার্সের লোকজন। এছাড়াও কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অরাজকতা তৈরীতে অর্থায়নের টাকা লেনদেন করছে মাহাবুব ব্রাদার্স।
খালিশপুরের বাসিন্দা হানিফ শিকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পোস্টার লাগানোর পর বিক্ষুব্ধ জনতা তা ছিড়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ রাতের আধারে পোষ্টারিং করে জনমনে আতঙ্ক তৈরী করার চেষ্টা করছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে আওয়ামীলীগের এ দেশের মাটিতে দাঁড়ানোর মতো সাহস ছিলো না। এজন্য চোরের মতো পোষ্টার লাগিয়েছে। আন্দোলনে নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। স্বৈরাচারের বিচার কোন না কোন দিন এ দেশের মাটিতেই হবে।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য মাজাহারুল ইসলাম রাসেল বলেন, আওয়ামী লীগ যে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত তা পোস্টারিং দেখে বোঝা যাচ্ছে। রাতের আধারে তারা পোস্টারিং করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। এ ধরনের কর্মকান্ড দেশের আইন, গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতার জন্য চরম হুমকি। তিনি আরো বলেন, ছাত্রদল বিশ্বাস করে দেশে যে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম অবশ্যই আইনসিদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। শিক্ষাঙ্গন ও জনপরিসরে কোনো অবৈধ রাজনৈতিক কার্যক্রম, প্রচার কিংবা উসকানি আমরা বরদাস্ত করব না। দেশ ও মানুষের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকলে এ ধরনের সাহস আওয়ামী লীগ করতে পারত না। এ ধরনের কাজে অর্থ যোগানদাতা এবং কুচক্রীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলা শাখার সাবেক সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও নিষিদ্ধ সংগঠনের এ ধরনের কর্মকান্ডে আমরা বিব্রত। খুলনার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খারাপ, তা এরই মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সাধারন মানুষ এখন হতাশ। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে তাদের আইনের আওয়াতায় আনতে হবে। এছাড়া পোস্টারিং এর সাথে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিং এ আছেন বলে জানান।