
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনাটির তথ্য যখন সামনে আসে তখন কিন্তু শুরুর দিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কোনো ছবি বা ভিডিও সাধারণ মানুষ দেখেনি। কিন্তু এই সুযোগে যারা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন তারা এআই-এর ব্যবহৃত দুর্ঘটনার ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো শুরু করেন। এই ভুয়া এআই প্রযুক্তি দিয়ে বানানো কনটেন্টগুলো মানুষ তখন বিশ্বাস করতে শুরু করেন। সঠিক ছবিগুলো সাধারণের সামনে আসায় যে গ্যাপ বা সময়ের ব্যবধান এআই কনটেন্ট নির্মাণকারীরা সে গ্যাপকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ছবি ও ভিডিওগুলো প্রচার করে। আর এটি করছে তারা নিজেদের কনটেন্টের ভিউ, লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার বাড়ানোসহ কনটেন্টটি ভাইরাল করার জন্য।
দেশে এখন বড় ধরনের যে কোনো দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা গোষ্ঠী যারা এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ তারা নিজেদের বানানো কনটেন্ট ভাইরাল করার উদ্দেশেই এমনটি করছে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যও এআই ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এর সিনিয়র ফ্যাক্টচেকার তানভীর মাহতাব আবীর জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে এআই ব্যবহার করে প্রচার হওয়া ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে ১৭৪টি। একই সময়ে এআই জেরারেটেড ভিডিও (ডিপফেক ভিডিও) শনাক্ত হয়েছে ২৪টি। বছরের শুরুতে বিনোদন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্য বেশি থাকলেও শেষ দুই মাসে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এআই এর ভুয়া কনটেন্ট বেশি ছড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে গুগলের নতুন পরিষেবা ভিইও থ্রি এর কারণে এআই এর ব্যবহার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এআই এর বিভিন্ন ভুয়া কনটেন্টের মধ্যে তাসনিম জারা-হান্নান মাসুদের চুম্বন দৃশ্য, কলকাতায় ওবায়দুল কাদেরকে দেখা যাওয়া এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এমন ভুয়া ছবি দিয়ে এআই কনটেন্ট বানানো হয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে এআই বা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি, মিথ্যা পক্ষপাতমূলক, অপপ্রচারমূলক, কুৎসা ও মানহানিকর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া এআই প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে দেশের অনেক নারী তারকা, নারী রাজনৈতিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত নারীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিশেষ করে রাজনীতিতে জড়িত নারী নেতৃত্বদের অপদস্ত করতে তাদের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এআই-এর মাধ্যমে এডিট করে বিকৃত করে সে ছবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে এআই প্রযুুক্তি ব্যবহার করে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে আসছে নির্বাচনেও এআই প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানার এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ডেপুটি এডিটর মো. ছাকিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য দেখব বলে আশঙ্কা করছি। এর সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিল, ভোট কেন্দ্রকে নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য তৈরি করার বিষয়গুলোও সামনে আসবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে নারীরাই বিভিন্ন ইস্যুতে ভাইরাল হচ্ছেন তাদের এআই প্রযুক্তির কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এআই প্রযুুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষদের কাছে এআই দিয়ে তৈরি করা কনটেন্ট শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। প্রয়োজনে তারা ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট ও ফ্যাক্ট চেকারদের সহায়তা নিতে পারেন।