Image description

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন বলে দাবি করলেন টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

টিউলিপ বলেন, বাংলাদেশের কিছু লোক ভুল করেছে এবং তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই। সত্য হলো, আমি শুধুই কোল্যাটারাল ড্যামেজ। কারণ, আমার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে ড. ইউনূসের শত্রুতার পরিণতি এটা।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত আগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হলে চলতি বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। তার দাবি, তদন্তকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে মা, ভাই ও বোনের জন্য প্লট নেওয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে পাঁচশ কোটি ডলার তছরুপ এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছে লন্ডনের কিংস ক্রসে ফ্ল্যাট গ্রহণ।

বরাবরের মতো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এসব অভিযোগ পুরোপুরি অবাস্তব।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আর্থিক কেলেঙ্কারি অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে একটি ছবি। এতে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রাশিয়া সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বসে আছেন শেখ হাসিনা আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন হাস্যোজ্জ্বল টিউলিপ। তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জড়িয়ে উত্থাপিত অভিযোগকে ‘নোংরা রাজনীতি’ বলেছেন তিনি।

কিংস ক্রসে ফ্ল্যাট গ্রহণের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ফ্ল্যাটের আগের মালিক তার ‘ধর্মপিতা’ এবং তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবে দুবছর আগে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেছিলেন, এই ফ্ল্যাট বাবা-মার কাছে থেকে উপহার পেয়েছেন।

ক্রিকলউডে থাকা নিজের বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রোপার্টি ডেভেলপারের নামে থাকা একটি বাড়িতে বসবাসের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ডেভিড অ্যামেস কর্মস্থলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে তাকে ঠিকানা বদলাতে বলা হয়।তাই তিনি নিজ বাড়ি ছেড়ে ওখানে উঠেছিলেন।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি নিজে বিষয়টি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে উপস্থাপন করেন।

সোমবার (১১ আগস্ট) ঢাকার আদালতে টিউলিপসহ আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হবে। সশরীরে বা ভিডিও লিংকের মাধ্যমে তিনি এই শুনানিতে অংশ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ বলেন, আমি হোগো কিথ কেসির কাছ থেকে আইনি সহায়তা নিচ্ছি। তাদের পরামর্শের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।

আদালতে হাজির হতে আনুষ্ঠানিক সমন পাননি দাবি করে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

সাবেক ব্রিটিশ এমপি বলেন, মনে হচ্ছে, আমি যেন এক চরম অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্নে আটকে গেছি, যেখানে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। অথচ আমি এখনও জানতে পারিনি, অভিযোগটা কী বা এই বিচার আসলে কী নিয়ে।

বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে টিউলিপের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। টিউলিপ দোষী সাব্যস্ত হলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ ইস্যু সামনে আসবে। তবে এমন কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই বলে দাবি করেছেন টিউলিপ।

টিউলিপের দাবি, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পালা থামেনি। উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবীরা স্পষ্টতা চাইলেও কোনও সুফল পাওয়া যায়নি।
চলতি বছর ড. ইউনূসের ব্রিটেন সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন টিউলিপ। তবে বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার দোহাই দিয়ে সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এদিকে, ব্রিটিশ অপরাধ তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির প্রায় নয় কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করেছে। এর মধ্যে একটি বাড়িও রয়েছে, যেখানে টিউলিপের মা শেখ রেহানা বসবাস করতেন। টিউলিপ দাবি করেন, এর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।