Image description

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তার সম্পদের অনুসন্ধান বিষয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছিল দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। তাদের মধ্যে ১৩৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, নিজের ও স্বজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন এবং বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শেষ করে মামলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দুদক জানায়, এসব কর্মকর্তা রাষ্ট্রের সঠিক কর আদায় না করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে উৎকোচ আদায়, নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেওয়া, পণ্যে করের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া, ভুয়া কাগজপত্রে সই করা, মিথ্যা তথ্য জানার পরও সঠিকভাবে যাচাই না করে ঘুস নিয়ে তথ্য গোপন করা এবং কর আদায় না করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। শুধু তাই নয়, এই কর্মকর্তারা অবৈধ টাকা আয় করে বিদেশেও বাড়ির মালিক হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদের খোঁজের জন্য দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছিল। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চলে এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ওইসব কর কর্মকর্তাদের পরিবার ও স্বজনদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব ব্যাংক লেনদেন সন্দেহজনক। কারণ, তারা আর্থিকভাবে খুব বেশি স্বাবলম্বী নন।

গত ২৯ জুন ঘুসের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এনবিআরের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এনবিআরের ওই ছয় কর্মকর্তা হলেন— আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু ও কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।

এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই এনবিআরের আরো পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। তারা হলেন— ঢাকা পূর্ব কর অঞ্চলের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল বন্দরের কমিশনার কামরুজ্জামান, রাজশাহীর উপকমিশনার মামুন মিয়া, অতিরিক্ত কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।

দুদক জানায়, এই ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা তদন্ত শুরু করেছিলেন। মোট ১৩৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কর গোয়েন্দা ও তদন্তের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, কাস্টমস নীতির সদস্য হোসেন আহমেদ, ভ্যাটনীতির সদস্য মো. আবদুর রউফ ও কর অঞ্চল বরিশালের কমিশনার মো. শাব্বির আহমেদের বিষয়ে তদন্ত চলমান। ঢাকার কর অঞ্চল-১ এর তিনজন কর্মকর্তা, কর অঞ্চল পরিদর্শী রেঞ্জের ১ নম্বর সার্কেল থেকে ৬ নম্বর সার্কেলের ৬ জন কর্মকর্তা, কর অঞ্চল ২ নম্বর পরিদর্শী রেঞ্জের ৭ থেকে ১২ নম্বর সার্কেলের মোট ৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান। এ ছাড়াও কর অঞ্চল পরিদর্শী রেঞ্জ-৩ এর ১৩ নম্বর থেকে ১৭ নম্বর সার্কেলের ১২ কর্মকর্তা এবং পরিদর্শী রেঞ্জ-৪ এর ১৮ নম্বর সার্কেল থেকে ২২ নম্বর সার্কেলের ৮ জনসহ মোট ১৩৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলছে।

দুদকের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে যে তদন্ত শুরু হয়েছিল তা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। খুব দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।