Image description

গতকাল সকালে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সাদাপাথরে দাঁড়িয়ে নিজের ফেসবুকে লাইভ করেন ফটোগ্রাফার আলমগীর আলম। তার কথায় ক্ষোভের সুর। এ সময় সাদাপাথর দেখিয়ে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘আপনারা আর সাদাপাথর এসে দেখবেন কী! পাথর নেই। লুট করা হয়েছে। এখন কেবল বালু আছে। বালু তো সবখানেই দেখা যায়।’ গত এক সপ্তাহে সাদাপাথর এলাকা থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার পাথর লুট করেছে পাথরখেকোরা। বালুময় হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। আর সাদাপাথরের বিরাণভূমিতে দাঁড়িয়ে হাপিত্যেশ করছিলেন ফটোগ্রাফাররা। তাদের রুটি-রুজির অন্যতম উৎস এই সাদাপাথর। পর্যটক গেলে তাদের আয় বাড়ে। ছবি তুলে টাকা উপার্জন করেন। সবাই নীরব, কিন্তু সরব কেবল ফটোগ্রাফাররা। বিষয়টি নজর এড়ায়নি সিলেট প্রশাসনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়া ভিডিও দেখে টনক নড়েছে।

গতকাল শেষ বিকালে অভিযান চালিয়েছে টাক্সফোর্সের স্পেশাল টিম। কিন্তু অভিযানের আগে যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাস্তবে এখন আর সাদাপাথরের পাথর নেই। বিশাল বিশাল পাথর ছিল। এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে, বসে ছবি তুলতেন পর্যটকরা। যন্ত্রদানব মেশিন দিয়ে ওই পাথরগুলোও লুট করা হয়েছে। সাদাপাথর ফটোগ্রাফি সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনোয়ার হোসেন সুমন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বালুর উপরে থাকা সাদাপাথর লুট বুধবারই শেষ হয়ে গেছে। এখন যন্ত্রদানব সেইভ মেশিন বসানো হয়েছে ওখানে। শ’ শ’ নৌকায় সেইভ মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে পাথর লুট করা হচ্ছে। ফলে পর্যটকদের জন্য সাদাপাথর আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতে করে ওই এলাকায় চোরাবালিও বাড়বে। পর্যটকদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হবে এলাকা।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সাদাপাথর থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসনকে ফোন করা হলে তারা জানান অভিযান চলছে। কিন্তু কোনোভাবেই লুটপাট থামছে না বলে জানান তিনি। কয়েক ঘণ্টার অভিযান শেষ হলেই ফের লুটপাটে নামে পাথরখেকোরা। ভোলাগঞ্জের স্থানীয় ১০ নম্বর এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চোখের সামনেই পর্যটক এলাকা সাদাপাথরশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে লুটের মহোৎসব। দিনের চেয়ে রাতে দিগুণ গতিতে পাথর লুট করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে সাদাপাথর এলাকায় কয়েকশ’ ইঞ্জিন নৌকা ও বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট করা হয়। এ সময় মেশিনের শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো পর্যটক এখন আর সাদাপাথরে যাচ্ছেন না। তারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে হাজার হাজার নৌকা দিয়ে অন্তত ৪শ’ থেকে ৫শ’ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। বারকি নৌকা দিয়ে পাথর লুট করা হলেও মূলত সেটি সর্বদলীয় পাথরখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা নেপথ্যে কাজ করেছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আলম মাহমুদ আদনান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সাদাপাথর লুটের ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সিলেট থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্পেশাল টাস্কফোর্সের টিম অভিযান চালিয়েছে। আমরা এতে পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় অভিযান চলছিল বলে জানান তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেবলমাত্র প্রশাসনের খামখেয়ালিপনার কারণেই সাদাপাথর লুট হয়েছে। সাদাপাথর হচ্ছে জিরো পয়েন্ট এলাকা। ওখানে দায়িত্বে থাকে বিজিবি’র সদস্যরা। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বিজিবি’র সদস্যরা সাদাপাথর এলাকা আগলে রাখেন। কিন্তু নানা সময় তারা পাথরখেকো চক্রের ক্ষোভের মুখে পড়েন। প্রায় সময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে করে পাথরখেকোরা ওই এলাকায় বিজিবি’র কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতে নানা সময় অপপ্রচার করে। এতে করে বিজিবি’র সদস্যরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নীরব রয়েছেন।