
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির ওপর নতুন শুল্কহার ৭ই আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যে এখন থেকে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসবে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি হবে ২৫ শতাংশ। যদিও রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার কারণে বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তার মানে ভারতের পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়ালো ৫০ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পাল্টা শুল্কের হার ১৯ শতাংশ। শুল্ক নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ৩০ শতাংশ।
এদিকে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের কারণে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি ও চীন-ভারত থেকে বিনিয়োগ আসার সুযোগ দেখছেন রপ্তানিকারকরা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে শিল্পে গ্যাস সংকট দূর করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন তারা। এ ছাড়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বন্দর ব্যবস্থাপনা সহজতর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন এবং ব্যাংকিং সেক্টরের সংকট দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
একাধিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের আগেই বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। ৬-৮ মাস ধরে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পাল্টা শুল্কের কারণে সামনের মৌসুম থেকে আরও বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে পারে। তারা জানান, গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস জানুয়ারি-জুনে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে। তার বিপরীতে অবশ্য ভিয়েতনামের ১১৯ ও বাংলাদেশের ৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। তার পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ভারত। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অন্য সব খরচ অপরিবর্তিত থাকলেও শুধু শুল্কের কারণে চীন ও ভারতের বদলে বাংলাদেশ থেকে একই পণ্য আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের খরচ কমবে ৩০ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদুল হাসান বাবু বলেন, ভারত ও চীনের ওপর বিদ্যমান বাড়তি শুল্ক বহাল থাকলে এই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি অর্ডার ও বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হলে এখনই টেক্সটাইল খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে বাংলাদেশের টি-শার্টসহ অন্যান্য পোশাক রপ্তানিও বাড়বে। তিনি বলেন, বাড়তি শুল্কের কারণে চীন ও ভারতের পোশাক রপ্তানি কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহের যে গ্যাপ তৈরি হবে, তা সরবরাহ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম ছাড়া আর কারও নেই।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ভারতের ওপর বাড়তি শুল্কের কারণে আমাদের টি-শার্ট রপ্তানি বাড়বে।