
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর আরও শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে তিনি ২৫ ভাগ শুল্ক বৃদ্ধি করেন। ফলে ভারতের জন্য বর্ধিত মোট শুল্কহার এখন দাঁড়িয়েছে শতকরা ৫০ ভাগ। ট্রাম্পের এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভারতে। বিশেষ করে তিনি যে নরেন্দ্র মোদিকে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন, তার বিরুদ্ধে এমন শুল্ক আরোপ করায় বিস্মিত ভারত। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তকে তারা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছে। তবে যদি রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করা হয়, তাহলে ভারতের ওপর সর্বশেষ অতিরিক্ত ২৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহারও করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে কবে নাগাদ সেই শান্তিচুক্তি হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
ট্রাম্প তার ইউরোপীয় মিত্রদের জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করতে চান, যাতে করে যুদ্ধরত দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। এই তিন নেতার বৈঠকের উদ্যোগ আসে ঠিক তখনই, যখন ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক বসিয়ে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করেন। এর ঠিক আগেই মস্কোতে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পুতিনের তিন ঘণ্টার বৈঠক হয়। ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমে বলেন, আমরা ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছি। এটা এর (আলোচনার অগ্রগতি) সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা আমি জানি না। কিন্তু বুধবার রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের খুবই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়ার তেল রাজস্বের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত কেবল বিপুল পরিমাণে রুশ তেলই কিনছে না, বরং সেই তেল থেকে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, রাশিয়ার সঙ্গে যদি কোনো শান্তিচুক্তি হয় তাহলে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক কি তুলে নেয়া হবে? জবাবে তিনি ইঙ্গিত দেন, সেটা সম্ভব। পাল্টা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় শুধু ভারত কেন, চীনকে বাদ দিয়ে? ট্রাম্প বলেন, এই শুল্কগুলো ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’। অর্থাৎ, রাশিয়ার তেলের রাজস্বের প্রবাহ বন্ধ করতে এটা করা হয়েছে। যদিও তিনি বলেন- এগুলো সব রুশ তেল ক্রেতার ওপরই প্রয়োগযোগ্য, তবে বাস্তবে কেবল ভারতের ওপরই শাস্তিমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে।
ওদিকে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন আরও কঠোর পদক্ষেপ বিবেচনা করছে। বিশেষ করে, রাশিয়ার গোপন তেল ট্যাংকার নেটওয়ার্ক ও যেসব সংস্থা তাদের কার্যক্রমে সহায়তা করছে, তাদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার চিন্তা রয়েছে। ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভারতের ওপর সাধারণ বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন এবং এবার রাশিয়ার তেল কেনার কারণে আরও ২৫ শতাংশ যুক্ত করেন। ভারত ট্রাম্পের নতুন শুল্ককে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেয়া হবে। নয়াদিল্লি আরও বলে, এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ অন্য অনেক দেশও একই কাজ করছে, তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়। ভারতের উপর নতুন তেলের শুল্ক ২১ দিন পর কার্যকর হবে। ভারত আরও বলেছে, আমাদের আমদানি বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে এবং ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়।