Image description

আজ ঐতিহাসিক ৩ আগস্ট। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এই দিনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাখো জনতার সামনে একদফা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যার ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে গুড়িয়ে যায় স্বৈর সরকারের মসনদ। 

স্মৃতির মিনার সেদিন ঝলসে উঠেছিল দ্রোহের আগুনে। মিনার চত্তরের সীমানা ছাড়িয়ে, লাখো কণ্ঠে ক্ষুব্ধ উচ্চারণ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের প্রতিটি প্রান্তে।

চব্বিশের কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে গিয়ে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পর, ঘটনা পরম্পরা যে সরকার পতনের পথে এগুচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। শিক্ষার্থী থেকে পেশাজীবী, শিল্পী থেকে বুদ্ধিজীবী, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বজ্রকণ্ঠে চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছিল নড়বড়ে মসনদে বসে থাকা শেখ হাসিনাকে। ছাত্রনেতাদের স্মৃতিতে ৩ আগস্টের সেই মুহূর্তগুলি আজও জ্বলজ্বলে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ২ আগস্ট একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ৯ এর মধ্যে গিয়ে রক্তের ছিটা পরে ১ হয়ে যায়। এটা খুবই ক্লিয়ার ছিল যে, ৩ তারিখ এক দফার ঘোষণা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি ছিল। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমাদের ওই কমিউনিকেশন ছিল। ৩ তারিখে মূলত জনগণের মধ্যে এসে জনগণের ভাষাটাকে নাহিদ ইসলাম কালেক্টিভলি প্রকাশ করেন। 

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান আরিফ বলেন, এক দফার ঘোষণা দেয়ার পর আমরা সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাই যে এখান থেকে আর সরার কোনো জায়গা নেই। যত রক্তপাত হোক আর যাই হোক শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে আমাদের এখান থেকে বাসায় পৌঁছাতে হবে।

ঢাবি শিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, শহিদ মিনারের এক দফা ঘোষণার কর্মসূচি এটা যতটা এক দফা হয়ে ইনফ্লুয়েন্স জারি করেছে তার চেয়ে শহিদ মিনারে মানুষের যে উপস্থিতি সে উপস্থিতির মধ্যে এক দফা নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। 

গণহত্যা আর গণগ্রেপ্তারে দমবন্ধ পরিস্থিতিতে, সেদিন গোটা বাংলাদেশের চোখ এই দ্রোহের চত্ত্বরে। অবশেষে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফার ঘোষণা অনুরণিত হয় বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে।

আন্দোলনের সময়জুড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব ছিলেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন। বলছিলেন, আওয়ামী লীগের ৫ আগস্টের পরিণতির চিত্রনাট্য, লেখা হয় শহিদ মিনারের সেদিনের জমায়েতে।

আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, আমি প্রথমবার যখন কথা বলছি পেছন থেকে কেউ না কেউ তখন বলছিল ভাই বলেন আমরা এখন রওয়ানা নেই গণভবনের দিকে। যার ফলে ৫ তারিখের একটা আবহ কিন্তু ৩ তারিখেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেখানে ৯ দফা শেখ হাসিনার সরকার বাস্তবায়ন করবে ঐ অবস্থাটা আর ছিল না। মানুষের মধ্যে ঐ উত্তেজনাটা চলে এসেছিল। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আজফার হোসেন বলেন, যে কোনো গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাসে বিশেষ বিশেষ কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়। বিস্ফোরক মুহূর্ত তৈরি হয়। আর ঐ বিস্ফোরক মুহূর্তের সমষ্টি ছাড়া আপনার গণ অভ্যুত্থান সফল হয় না। এই যে মুহূর্তের কথা বলছেন ওই সিগনেফিসেন্স তো অবশ্যই আছে। এটা তো আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছে, শেখ হাসিনা তার কারণে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। 

এ শিক্ষাবিদ মনে করেন, বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় গেঁড়ে বসা ১৬ বছরের স্বৈরশাসনকে এক দফার চ্যালেঞ্জ ছুঁ*ড়ে দেয়ার যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল শহিদ মিনার চত্ত্বরে, তা দুয়ার খুলেছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের নতুন কাব্য লেখার।