
ছোট একটা রুম। সেই রুমের খাটের উপর শুয়ে আছে কঙ্কাল কাঠামোর এক শিশু। পাশেই বসে প্লাস্টিকের একটা প্লেট দিয়ে বাতাস করছেন এক ভদ্রমহিলা। বাতাস পেয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ ডেকে শুয়ে আছে শিশুটি। এই চিত্রটি আর কোথারও নয়, গাজার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা পুষ্টিহীনতার শিকার জানা’র জীবন যুদ্ধের চিত্র। মাত্র ১১ কেজি ওজনের ক্ষীণ শরীরের ‘জানা’ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দা নাজমা আয়াদের আট বছরের কন্যা সন্তান। গত ২০ জুলাই তিনি আরেক মেয়ে জুরিকে অপুষ্টির কারণে হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি অনুভব করছি, ধীরে ধীরে আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলছি। দিন যতই যাচ্ছে ততই ওর যন্ত্রণা যেন বেড়েই চলেছে। দেখা ছাড়া আমার করার মতো আর কিছুই নেই।’
গাজার চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ‘চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতি -খাদ্য সংকটের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় জটিল অবস্থায় থাকা অপুষ্টহীনতার শিকার শিশুদের চিকিৎসা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে।’
রয়টার্স জানিয়েছে, আয়াদের ছোট মেয়েকে গত বছর দেইর আল-বালাহ শহরের একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল কর্পস ক্লিনিকে অপুষ্টির চিকিৎসা জন্য নেয়া হলে শারীরিক দুর্বলতাওও বৃদ্ধি বিলম্বের কারণে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়।
আয়াদ বলেন, চিকিৎসায় সাময়িক উন্নতি হলেও এখন তার অবস্থার আবারও অবনতি ঘটেছে। ওর ওজন এখন মাত্র ১১ কেজি। চোখে দেখতে পায় কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হয়। গাজার সব প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ও হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চিকিৎসা সেবা বন্ধ ও খাদ্য সংকটের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
পেশেন্ট ফ্রেন্ডস বেনেভোলেন্ট সোসাইটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সুজান মারুফ বলেন, ‘ওর শরীরে ইডিমা শুরু হয়েছে। প্রোটিন ও খাদ্যের ঘাটতির কারণে শরীর পানি ধরে রাখছে, যে কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুলে যাচ্ছে।’
বিশ্বের প্রধান ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং তা ঠেকাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ জরুরি। কঙ্কালসার ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষুধা-সংক্রান্ত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত ১৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। যার মধ্যে ৯০ জন শিশু রয়েছে। এদের বেশিরভাগই গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছে।
নাজমা আশাবাদী ছিলেন তার দুই কন্যা সন্তানকে গাজার বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে গত সেপ্টেম্বরে তাদেরকে চিকিৎসা-প্রত্যাশীদের তালিকায়ও যুক্ত করেছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এক মেয়েকে হারিয়েছে, আরেক মেয়েকে বাঁচানোর আশায় বুক বেঁধে আছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি আবেদন করছি, জানা‘কে যেন দ্রুত দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।’
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ইসরায়েল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিছু সাহায্য প্রবেশের ঘোষণা দেয়। তবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তারা এখনও পর্যাপ্ত সহায়তা প্রবেশ করাতে অনুমতি পাচ্ছে না।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, হামাস সহায়তা লুট করে নিচ্ছে। তবে হামাস বরাবরের মতো তা অস্বীকার করেছে। সংগঠনটি পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, ইসরায়েল গাজার জনগণকে অনাহারে রেখে সাহায্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এদিকে ইসরায়েলও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা এখনও হামাসের সাহায্য লুটপাটের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি।