Image description

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ। 
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিশুদের হাসি, চঞ্চলতা আর স্বপ্নভরা ভবিষ্যৎ মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আর এই বিভীষিকার কেন্দ্রবিন্দুতে পড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে আশারাফুল ইসলাম নীরবের পরিবার। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাদিয়া। আর মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফি। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন এই শিশু।

সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের উপর। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা, মুহূর্তেই আগুন জ্বলে ওঠে ভবনের একাংশে। স্কুলের পাঠ চলাকালে নেমে আসে এই মর্মান্তিক বিপর্যয়। ঘটনার সময়, নাদিয়া ও নাফি দুই ভাইবোনই সেখানে ছিল। আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধ হয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাদিয়া ও তার ছোট ভাই প্রথম শ্রেণির ছাত্র নাফি। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসেন তাদের বাবা আশারাফুল ইসলাম নীরব। শিশুকন্যার আগুনে ঝলসানো দেহ দেখার মতো শক্তি ছিল না তার, তবুও বুকে পাথর বেঁধে হাসপাতালে ছুটে যান। শিশু দুটিকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও ছোট্ট নাদিয়া মধ্য রাতেই হার মানে। রাত ৩টা বাজে যখন চিকিৎসকরা ঘোষণা দেন, নাদিয়া আর নেই। বাবার বুক ফেটে যায় কান্নায়। চোখের জলে মিশে যায় তার মেয়ের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, ভালোবাসা। আর তার ছোট ভাই নাফি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে বার্ন ইন্সটিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার ভার সইতে পারছেন না পিতা আশারাফুল ইসলাম নীরব। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। প্রিয় কন্যার লাশ আর ছোট ছেলের জীবনমৃত্যুর দোলাচলে এক অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি। ৯০ শতাংশ দগ্ধ নাফিকে ঘিরে এখন কেবলই অপেক্ষা জীবন নাকি মৃত্যু। 

ঘটনার পরপরই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনোয়ার ছুটে যান হাসপাতালে। বন্ধু আশারাফুলকে সামলে রাখার চেষ্টা করেন, দেন মানসিক সান্ত্বনা। তিনি জানান, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি দিনাজপুর থেকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন। ভেতরে ঢুকতে কড়াকড়ি থাকায় বাইরে থেকে খোঁজ রাখছেন। নাদিয়া ও নাফি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় থাকতো। বিকাল ৩টায় কামারপাড়ায় নাদিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান আনোয়ার। তিনি আরও জানান, তার বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলায়। কি বলবো বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না মেয়েকে দাফন করতে গিয়েছে বাবা-মা আর এদিকে ছেলে আইসিউতে, নাফির অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের উপর বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। ফায়ার সার্ভিসের উত্তরাসহ আশপাশের ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। গতকাল দুপুর ২টায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।