
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনেও মিজানুরের আত্মার টান ছিল প্রবল। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের এই তরুণেরা দেশের ভবিষ্যৎ, যারা মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেলে দেশ এগিয়ে যাবে। তাই ৫ আগস্ট বিকালে বাইপাইল বাসার সামনেই শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালে দোকান বন্ধ করে ছেলেকে নিয়ে ছাদের ওপর বসে ছিলেন তিনি, গর্বে ভরপুর।
অপরিকল্পিত হামলায় গুরুতর আহত মিজানুরকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনটি রক্তের ব্যাগ দেওয়া হলেও তিনি বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্ত্রীর ছুটে আসা ও হাসপাতালে চিৎকারের মধ্যে কাঁপছিল পুরো বারান্দা।
আজ মিজানুরের ছেলে বাবার পথেই হাঁটতে চায়। সে বলে, ‘আমার বাবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে মারা গেছে, আমি অন্যায় মেনে নেব না।’ তবে অভাবের ভার এখনও তার কাঁধে চাপ, আর মেয়ে এখনো স্কুলে যেতে পারেনি। মায়ের কাছে বসে বলে, ‘বাবা আর স্কুলে যেতে বলবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।