Image description

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে কন্ট্রোল রুমে শেষবারের মতো যোগাযোগ করেছিলেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তার কণ্ঠে ছিল উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা— “বিমান ভাসছে না... মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।”

গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা পুরাতন বিমানঘাঁটি থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে একক উড্ডয়নে (সলো ফ্লাইট) বের হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির। এটি ছিল তার প্রথম সলো ফ্লাইট, যা বৈমানিক প্রশিক্ষণের সবচেয়ে জটিল ও চূড়ান্ত ধাপ।

 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানটি উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরা এলাকা অতিক্রম করে। এ সময় আচমকা বিমানের গতিপথ ও ভরিবিদ্যা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। তখনই পাইলট কন্ট্রোল রুমকে বার্তা দেন— “বিমান ভাসছে না... মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।

 

 

এরপর কন্ট্রোল রুম থেকে জরুরি নির্দেশ আসে— ইজেক্ট করার, অর্থাৎ বিমানের ককপিট থেকে নিজেকে বের করে নেওয়ার। কিন্তু পাইলট তৌকির বিমানটিকে রক্ষা করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিমানটিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তিনি।

 

দ্রুতগতিতে বিমানটি ফের ঘাঁটির দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন তৌকির। কিন্তু মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় তৌকিরসহ স্কুলের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারায় এবং আহত হয় আরও কয়েকজন।

 

জানা গেছে, সলো ফ্লাইট হচ্ছে একটি বৈমানিকের স্কিল, দক্ষতা ও মানসিক দৃঢ়তার চূড়ান্ত পরীক্ষা। এ ধাপে কোনো প্রশিক্ষক বা কো-পাইলট না থাকায় পুরো দায়িত্ব একাই সামলাতে হয় পাইলটকে। যুদ্ধবিমান চালানোর অনুমতি পাওয়ার আগেই এই কঠিন ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

 

বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ফ্লাইট সাধারণত জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে নেওয়া হয়। তবে নগরাঞ্চলের আকাশেই সলো ফ্লাইট সম্পন্ন করতে হয়, কারণ এতে যোগাযোগ, কনট্রোল ও জরুরি সহায়তা সহজ হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ত্রুটিপূর্ণ ও প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।