Image description

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে ফর্মুলা ঐকমত্য কমিশন দিয়েছে, তাতে রাজি হয়নি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দুটি দলই চায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবে। তা সম্ভব না হলে আগের নিয়মে সাবেক প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে এতে রাজি নয় এনসিপিসহ অধিকাংশ দল। তারা কমিশনের প্রস্তাবমতো সরকার, বিরোধী দল এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের দেওয়া নাম থেকে পছন্দক্রম অনুযায়ী ভোটে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন চায়।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে দলগুলো এ অবস্থান জানায়। কমিশনের প্রস্তাব ছিল, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী। বিএনপিসহ পাঁচ দল এতে রাজি না হলেও, অধিকাংশ দল একমত হওয়ায় কমিশন এই বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ রেখে ঐকমত্য ঘোষণা করেছে। কমিশন বলছে, যেসব দল এই প্রস্তাবে রাজি নয়, তারা নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি উল্লেখ করবে। নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান হওয়ার সুযোগ রেখে সংবিধান সংশোধন করতে পারবে। 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিসহ ৭ সদস্যের কমিটি গঠনের নতুন প্রস্তাব করেছে কমিশন। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়োগের প্রক্রিয়া এর বাইরে রাখা হয়েছে। এর আগে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। বিএনপির বিরোধিতায় এই প্রস্তাব থেকে সরে আসে কমিশন। 

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে অচলাবস্থা
সংলাপের পর কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া তিন-চতুর্থাংশ দল ও জোট একমত হয়েছে– প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হওয়া উচিত নয়। কিছু দল ভিন্নমত দিয়েছে। তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

গতকালের সংলাপে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকারকে নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে। জামায়াত এই কমিটিতে তৃতীয় বৃহত্তম দলকে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করলে বিএনপি তা মেনে নেয়। বিএনপি প্রস্তাব করেছে, প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সরকারি এবং বিরোধী দল পাঁচজনের করে নাম প্রস্তাব করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল দুটি নাম প্রস্তাব করবে। জামায়াত প্রস্তাব করেছে, সরকারি ও বিরোধী দল তিনজন করে নাম দেবে। 

কমিশনের প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধী দলের ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত বাছাই কমিটি দলগুলোর প্রস্তাবিত নাম থেকে প্রধান উপদেষ্টা পদে একজন বাছাই করবে। এরপরের দুই ধাপেও বাছাই সম্ভব না হলে কমিটির সদস্যরা র‌্যাঙ্ক চয়েজ ভোটে নির্বাচিত করবেন। বিএনপি ও জামায়াত ভোটে রাজি হয়নি। বিএনপি ও জামায়াত চায়, কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ  সম্ভব না হলে সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে। এনসিপিসহ অন্যরা এতে রাজি নয়।

আলী রীয়াজ বলেছেন, বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল র‌্যাঙ্ক চয়েজে একমত না হওয়ায় অচলাবস্থা রয়েছে।

দলগুলো যা বলল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি প্রস্তাব করেছে সর্বসম্মতিক্রমে কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবে। 
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা সম্ভব কিনা? নাকি বিএনপি সরকারের হাতে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ রাখতে চায়–এসব প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেছেন, একানব্বই এবং ছিয়ানব্বইয়ে সর্বসম্মতিক্রমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে। জামায়াত ভোট চায় না, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে। ভোট হলে হর্স ট্রেডিং হতে পারে। ঐকমত্য না হলে বিচার বিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টা হবেন।