Image description
চলছে জুলাই পদযাত্রা

জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গোপালগঞ্জে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সমাবেশ মঞ্চ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর কক্সবাজারে ভাঙচুর করা হয় এনসিপির পথসভার মঞ্চ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিয়ে গড়া নতুন এ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

এসব হামলা ও বাধাকে শুরুতেই এনসিপির রাজনীতি থামিয়ে দেওয়ার ‘অপচেষ্টা’ বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পুরোনো ধাঁচের রাজনীতিতে অভ্যস্ত। এজন্য এনসিপির নতুন ধারার রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছেন তারা। তবে এভাবে দমানো যাবে না উল্লেখ করে এনসিপি নেতারা বলেন, যদি হামলা-মামলা দিয়ে বাধার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আরও দ্বিগুণ শক্তিতে রাজনীতিতে টিকে থাকবেন তারা।

জুলাই পদযাত্রা কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে হামলার শিকার হন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। হামলা, সমাবেশ মঞ্চ ভাঙচুর, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন, জেলা কারাগার চত্বরে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারে (এপিসি) চড়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

গোপালগঞ্জের পর গত শনিবার কক্সবাজারেও হামলার শিকার হন এনসিপির নেতারা। দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যের জেরে ‘জুলাই পদযাত্রা’ বান্দরবান যাওয়ার পথে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধায় কক্সবাজারের ঈদগাহ, চকরিয়া, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার পূর্বনির্ধারিত পথসভা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর নিরাপত্তা শঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কক্সবাজারের চকরিয়ার হাঁসের দীঘি আর্মি ক্যাম্প এলাকায় দুই ঘণ্টা থামিয়ে রাখে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় সেনাসদস্যদের কড়া নিরাপত্তা কর্ডনে চকরিয়া এলাকা পার হয় জুলাই পদযাত্রার গাড়িবহর। এ ছাড়া বেশ কয়েক জায়গায় বাধার সম্মুখীন এবং হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত কালবেলাকে বলেন, ‘হামলা, হুমকি দিয়ে আমাদের দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা যেন এই দেশে রাজনীতি করতে না পারি, সে বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না। হুমকি-ধমকি ও হামলার ভয় দেখিয়ে খুনি হাসিনাও আমাদের থামাতে পারেনি, আর কেউ পারবেও না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্যই আমাদের রাজনীতি। আর সেই রাজনীতি আমরা চালিয়ে যাব।’

পুরোনো ধাঁচের রাজনৈতিক দল তাদের নতুন ধারার রাজনীতি মেনে নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এটা পুরোনো রাজনীতি। এ হামলা, মামলা ও ভয় দেখানোই তাদের রাজনীতি। আমরা নতুন রাজনীতির কথা বলছি। তাই তারা সেটি নিতে পারছে না। তারুণ্যের গণজোয়ার তারা সহ্য করতে পারছে না। তারা এ রাজনীতি ধরতে পারেনি বলেই তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রত্যাখ্যান করছে। এর চেয়ে কঠিন বাধা আমরা অতীতে অতিক্রম করছি। শেখ হাসিনার তুলনায় এ হামলা, হুমকি বেশি নয় বলেই আমরা মনে করি।’

এমন হামলা-বাধা রাজনীতির মাঠে তাদের আরও এগিয়ে দেবে উল্লেখ করে আতাউল্লাহ বলেন, ‘যতই বাধা আসুক আমরা আরও বেশি সংগঠিত হব এবং এগিয়ে যাব। এ ছাড়া এ কঠিন লড়াইয়ে প্রকৃত কর্মীদের আমরা খুঁজে পাব। আরও বেশি উজ্জীবিত হব। যতই বাধা আসুক আমরা আরও বেশি সংগঠিত হব এবং এগিয়ে যাব। এ ছাড়া অনেকে মনে করত আমরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনীতি করছি। সেটাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা দূরে থাক, ন্যূনতম নিরাপত্তাও অনেক সময় সরকার আমাদের দিতে পারছে না।’

একই ধরনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের এ লড়াই কঠিন। এ হামলা, বাধা আমাদের সামনে আসবে জেনেই আমরা এ পথ বেছে নিয়েছি। শেখ হাসিনা যেহেতু আমাদের দমাতে পারেনি, আর কোনো শক্তিও আমাদের রুখে দিতে পারবে না। আমাদের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি, নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের লড়াই চলবে।’

একই সুরে কথা বলেছেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার চট্টগ্রামে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘আমরা এক ধরনের ডিফিকাল্টির (প্রতিবন্ধকতা) মধ্যে আছি। আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে বাধা আসছে। আমরা আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আপনাদের দোয়া আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

এনসিপির শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ আমরা শুরু করেছি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্তের যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, সেই লড়াই শেষ না করে আমরা থামব না। ফ্যাসিবাদ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে আরও একটি লড়াই আসছে, আমরা তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’