Image description
বিনামূল্যের বইয়ের মান যাচাই এজেন্সি

শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বিতরণ করা বইয়ের মান যাচাইকারীদের মধ্যে চলছে এক আজব প্রতিযোগিতা। সরকারের অন্যান্য দপ্তরে যেখানে ব্যয় কয়েক গুণ বেশি দর দেখানো হয়, তার বিপরীতে বইয়ের মান যাচাই এজেন্সি নিয়োগ হচ্ছে নামমাত্র মূল্যে। কেউ কেউ আছেন বিনা পয়সায়ও সেই কাজ করে দিতে চান। আবার কেউ আছেন আরেক ধাপ উপরে। কয়েক কোটি টাকার কাজ মাত্র ৭৭ হাজার টাকায় নিতে ঘুষ বাবদ খরচ করেছেন কোটি টাকা। প্রথমে শুনে মনে হতে পারে দেশের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ‘মহান হৃদয়’-এর অধিকারী মানুষরা বুঝি তুমুল প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যার নেপথ্যে ভয়াবহ দুর্নীতি। একবার পরিদর্শন এজেন্সির কাজ পেলে রাতারাতি বাড়ি গাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেন ‘পরিদর্শন এজেন্সি’ পাওয়া মানেই রূপকথার সেই আলাদীনের চেরাগ পাওয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে প্রাথমিক স্তরের বইয়ের মান যাচাইয়ে পরিদর্শন এজেন্সি কাজ নিয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকায়। ঠিক ৯ বছর পর একই কাজ করছে এজেন্সিগুলো মাত্র ২৯ লাখ টাকায়, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্লেষকদের মতে, এসব কাজের জন্য ন্যূনতম ব্যয় কোটি টাকা। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যসহ দেশের সামগ্রিক জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। সেখানে কীভাবে পরিদর্শন এজেন্সি ১০ বছর আগের চাইতেও ১০ ভাগের এক ভাগ দরে কাজ নিচ্ছে। এমনকি বিনা পয়সায়ও পরিদর্শন এজেন্সির কাজ করে দিতে আগ্রহীর সংখ্যাও কম নয়। অথচ এই কাজে ন্যূনতম ব্যয় কোটি টাকা।

শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক স্তরেও একই চিত্র। দেড় কোটি টাকার কাজ এখন ১০ লাখ টাকায় নেমেছে। সরকার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখলেও এজেন্সিগুলো তা নিতে রাজি নয়। বরং কম দামে কাজ নেওয়ার এক বিস্ময়কর প্রতিযোগিতা চলছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পরিদর্শন এজেন্ট হতে এত আগ্রহ কেন? তবে কি সেখানে মধু আছে?

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, প্রতি বছর ৩০ কোটিরও বেশি বই ছাপার কাজ তদারকি এবং সেগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে তৃতীয় পক্ষ বা এজেন্সি নিয়োগ করে থাকে। শুধু এনসিটিবি নয়, টিসিবি, রেলওয়ে, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য তৃতীয়পক্ষের ওপর নির্ভর করে। মূলত দরপত্র পাওয়া প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি ভারসাম্য রাখতেই এসব এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। বই ছাপার আগে তিন স্তর এবং পরে এক স্তর, মোট চার স্তরে তদারকি করে পরিদর্শন এজেন্সি। গভীর রাতে নিম্নমানের বই ছাপানো ঠেকাতে প্রতিটি ছাপাখানায় ২৪ ঘণ্টার জন্য তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয়। তারা প্রথমে প্রেসে কাগজের মান (স্থায়িত্ব ও জিএসএম) ঠিক আছে কি না, তা দেখে ছাড়পত্র দিলেই বই ছাপা শুরু হয়। ছাপা হওয়ার পর বাঁধাইসহ সব ঠিক থাকলেই ডেলিভারির জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এই স্তরকে প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) বলে। তার জন্য পিডিআই এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। বই পৌঁছার পর প্রত্যেক উপজেলা থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বই সংগ্রহ করে সেগুলোর মান যাচাই করতে পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব কাজ করতে প্রাথমিকে ৭২ থেকে ৭৫ লাখ টাকা, মাধ্যমিক ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এজেন্সিগুলো কাজ নেয় তার অর্ধেক বা তারও কম মূল্যে।

দরপত্রের নথি বলছে, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে পিডিআইর জন্য মোট ছয় প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল সাড়ে ৩২ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। পিপিআর অনুযায়ী, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার বিধান থাকলেও এনসিটিবি রহস্যজনকভাবে ষষ্ঠ দরদাতাকে কাজ দেয়। এতে সরকারের অতিরিক্ত ২৯ লাখ টাকা খরচ হয়। এনসিটিবির যুক্তি ছিল বিদেশি প্রতিষ্ঠান। বেশি টাকায় কাজ দিলে তারা হয়তো ভালো মানের পরিদর্শন করবে। দিনশেষে ওই প্রতিষ্ঠান প্রিন্টার্স মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের কাগজকে ‘ভালো’ বলে ছাড়পত্র দিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যার প্রমাণ মিলেছে এনসিটিবির ৩২টি টিম প্রতিবেদনে। সেখানে গড়ে ৩০ শতাংশ নিম্নমানের বই দেওয়ার তথ্য মিলেছে।

 

সূত্র বলছে, অভিজ্ঞতা না থাকার পরও পিএলআইর কাজ দেওয়া হয় এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমানের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে। এখানে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ লাখ সর্বনিম্ন ৭১ হাজার টাকায় দর পড়লেও কাজ দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে। এরপর তাদের প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। কাজ পাওয়া ১১৬টি প্রেসের মধ্যে মাত্র ২৯টি প্রেসের বই নিম্নমানের পেয়েছে বলে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জ করে চারটি প্রেস। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি পিএলআই প্রতিবেদনটি বাতিলের পাশাপাশি বইয়ের মান যাচাইয়ে পিএলআই পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করেছে। বিগত কয়েক বছরের দরপত্র পর্যালোচনা করে একই চিত্র পেয়েছে কালবেলা।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, এজেন্সি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবার অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে এনসিটিবির বিতরণ শাখা। কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা, নামমাত্র দর দেওয়ার পরও কাজ দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠানকে। যাদের নেপথ্যে ছিল বড় কয়েকটি ছাপাখানা মালিকের সরাসরি বিনিয়োগ। শুধু তাই নয়, কাজ পেয়েই তারা অন্য ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে এক ধরনের ‘সমঝোতা’ করে নিম্নমানের বইকে ‘ভালো’ মানের উল্লেখ করে সনদ দিয়েছে। এমন প্রতিযোগিতার কারণে পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভালো মানের এজেন্সিগুলো এখানে কাজ করতে আসেনি। শুধু তাই নয়, ফরাসি ব্যুরো ভ্যারিটাসের মতো প্রতিষ্ঠান কোটি টাকার দরপত্র এখন ৩০ লাখে নামিয়ে এনেছে। অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যারা এই কাজ পাচ্ছে, প্রায় সবাই আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাদের অনেকেই রাতারাতি বিশাল স্থাবর অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এমন অভিযোগ পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। বিষয়টি নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘এ পরিদর্শনের কাজে কী মধু, আমিও জানি না। নানা জায়গা থেকে শুনি, ওমুক প্রতিষ্ঠান এবার পরিদর্শন করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। এবারের তদন্তে যদিও তার কিছু প্রমাণ মিলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই আমার কাছে এসে বলছে, স্যার আমি বিনা পয়সায় কাজ করে দিতে চাই। তার মানে, এখানে কিছু একটা ঘাপলা আছে। এবার সেই কিছুটা বের করতে শক্ত শর্তাবলি দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কঠোর তদারকির মধ্যে রাখা হবে। এ ছাড়া পিএলআই এজেন্ট উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’

৭৭ হাজার টাকায় পিএলআই এজেন্ট

২০২৩ সালে মাত্র ৭৭ হাজার টাকায় পিএলআই এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলা থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে ছাপানো পুস্তক সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এত কম টাকায় কীভাবে সম্ভব? ওই সময় দুদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা পড়ে। যেখানে এই ৭৭ হাজার টাকার কাজটি পেতে এনসিটিবির তৎকালীন সচিব নাজমা আক্তারকে ১ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রমাণ মেলে। নাজমা ছাত্রলীগ নেত্রী হওয়ায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুধু তাই নয়, চলতি বছর মাধ্যমিকের পিএলআই প্রতিবেদনে ২৯টি ছাপাখানা থেকে নিম্নমানের বই দেওয়ার তথ্য উঠে আসে। তবে যেসব বড় প্রেস ২ থেকে ৩ কোটি বই ছেপেছে, তাদের কোনো বই নিম্নমানের বলে এজেন্টরা চিহ্নিত করেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পিএলআই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ছাপাখানা মালিকদের ২০ শতাংশ বিল ছাড় করা হয়। অর্থাৎ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কাজে পিএলআই প্রতিবেদনের কারণে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বিল আটকে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় বড় প্রিন্টার্সগুলো এসব এজেন্সির পেছনে বিনিয়োগ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরী কালবেলাকে জানান, ‘পিএলআই এজেন্সিকে বাতিল করার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত ও সুপারিশ এসেছে। প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে ভিন্ন কৌশলে এটি করা যায় কি না, তা আমরাও ভাবছি।

২৯ লাখ টাকার কাজে খরচ ৭২ লাখ:

প্রাথমিকের পিডিআই এবং পিএলআইর কাজ একসঙ্গে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে এই কাজ দেওয়া হয়েছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকায়। ওই সময় দরপত্র দিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। ২০২১ সালে এনসিটিবিতে আসার পর তার মান ও দরের পতন ঘটতে থাকে। সর্বশেষ গত বছর (২০২৪) মাত্র সাড়ে ২৯ লাখ টাকায় কাজ দেওয়া হয়। এর আগের বছর ২০২৩ সালেও কাজ দেওয়া হয় ২৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকায়। এনসিটিবি বলছে, এই কাজটি করতে হলে কমপক্ষে খরচ হয় ৭২ থেকে ৭৫ লাখ টাকা।

উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা খরচের খাতের বর্ণনা দেন। বইয়ের মান যাচাইয়ের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিটি লট (২২৭) থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০ কপি বই সংগ্রহ করে বিএসটিআইর মাধ্যমে মান পরীক্ষা করিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া। প্রতিটি বইয়ের মান যাচাইয়ে বিএসটিআইর খরচ ৫৫১ টাকা। সেই হিসাবে, সাড়ে ৪ হাজার বইয়ের মান পরীক্ষা করাতেই প্রায় ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া মোট কাজের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বাদ দিলে প্রতিষ্ঠানটি পায় মাত্র সাড়ে ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানটি যে টাকায় কাজ নিয়েছে, তা কেবল বিএসটিআইর পরীক্ষার খরচের চেয়েও কম। পিএলআইর জন্য প্রতিটি উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। পিডিআইর কাজ পাওয়া শতাধিক প্রেসে ২৪ ঘণ্টার জন্য তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয়। এর জন্য কমপক্ষে ৪০ জন অভিজ্ঞ লোকের চার মাসের জন্য প্রয়োজন হয়, যাদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা। এসব খরচের সঙ্গে নিজস্ব ল্যাব, অফিস পরিচালনা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচও যুক্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে ৭২-৭৫ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র সাড়ে ২৯ লাখ টাকায় কীভাবে মানসম্পন্ন কাজ করা সম্ভব? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

একটি ছাপাখানার মালিক কালবেলাকে জানান, সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার জন্য তারা লোকসানে কাজ করছেন, যা সত্যি। তবে মানের ব্যাপারে তারা শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, এক সময় এই কাজ সাড়ে ৩ কোটি টাকায় করা হলেও ২০২০ সালের পর থেকে এর মান নামতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তিন বছর আগেও ৭৯ লাখ টাকায় কাজ নেওয়া হলেও এখন সবাই কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কম দরে দরপত্র জমা দেয়।

৮-১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি:

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৩০ কোটির বেশি বইয়ের তদারকির কাজটি ঘুরেফিরে ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নতুন কেউ সেখানে কাজ পেলেও সিন্ডিকেটের কাছে ধরাশায়ী হয়ে যেতে হয়। এনসিটিবির বিতরণ শাখা এই সিন্ডিকেটকে সহায়তা করে। ২০১০ সাল থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে সেগুলো হলো—‘বাল্টিক, ব্যুরো ভ্যারিটাস, কন্টিনেন্টাল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্সপেকশন, শেখ ট্রেডিং অ্যান্ড ইন্সপেকশন, কন্ট্রোল ইউনিয়ন, ফনিক্স, ইনফিনিটি সার্ভে, ইউনাইটেড সার্টিফিকেট সার্ভিসেস ও হাইটেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন। এর মধ্যে শুধু ব্যুরো ভ্যারিটাস ফরাসি প্রতিষ্ঠান। অন্যগুলো দেশীয়। ব্যুরো ভ্যারিটাস এক সময় কোটি টাকায় দর দিলেও চলতি বছর মাধ্যমিকে ষষ্ঠ দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছে ৩২ লাখে।

জানা গেছে, গত বছর এনসিটিবির মাধ্যমিকে পিডিআই দরপত্রে বিজ্ঞপ্তিতে জালিয়াতি করেন এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ করলেও শিডিউলে শুধু সরকারি কাজের অভিজ্ঞতার কথা লিখে দেন। যদিও ওই সময় তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ভুলবশত এমনটি হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সময় পদায়ন পাওয়া এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়, দুদক ও এনসিটিবির চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক অভিযোগ পড়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত বছর পিডিআই কাজ দিয়েছে তৎকালীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিটি। আর এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা কমিটি রয়েছে। তারাই সব সিদ্ধান্ত নেন।