Image description
ফিটনেসহীন গাড়ি কমপক্ষে পাঁচ লাখ ঢাকায় অভিযান চালাচ্ছেন সাতটি আদালত

দেড় দশক ধরে উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট, ধর্মঘটের হুমকি ও অসহযোগিতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে পুরনো বাস ও ট্রাক উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। অভিযান শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে তা বন্ধ করতে বাধ্য হতো সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত মালিকদের অসহযোগিতা, হুমকির মধ্যেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসন গতকাল রবিবার থেকে পুরনো গাড়ি উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে। গতকাল অভিযান চলে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে মেয়াদ পেরোনো বাস ও ট্রাক রয়েছে ৮০ হাজার ৩০৯টি। বিআরটিএ ২০ বছরের পুরনো হলেই বাসকে মেয়াদোত্তীর্ণ বলছে, আর ট্রাকের ক্ষেত্রে তা ২৫ বছরের বেশি সময়কে ধরা হচ্ছে। জানা গেছে, সর্বশেষ ছয় মাস সময় দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মালিকরা এসব লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি সড়ক থেকে তুলে নেননি।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে গত জুন পর্যন্ত মেয়াদ পেরোনো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকার ছিল ৪১ হাজার ১৪০টি ও বাস-মিনিবাস ছিল ৩৯ হাজার ১৬৯টি।

২০২৩ সালের ১৭ মে সরকার বাস ও মিনিবাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছিল ২০ বছর। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ মালবাহী যানবাহনের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছিল ২৫ বছর। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান সফলভাবে শেষ করতে পারেনি বিআরটিএ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে।
 
এক পর্যায়ে সরকার গত ৬ জুন পুরনো যানবাহনের বয়সসীমার আগের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রাখে ও এগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে গত ২৪ জুন বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুরনো গাড়ি জব্দ করে সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, অভিযানে পুরনো গাড়ি জব্দ করা ছাড়াও চলাচলের অনুমতিহীন, পরিবেশ দূষণকারী, রংচটা ও ফিটনেসহীন গাড়িও ধরা হবে। দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি আছে কমপক্ষে পাঁচ লাখ। সরকারি নিয়ম অনুসারে সরকারি ফি দিয়ে এগুলোর ফিটনেস সনদ হালনাগাদ করা হয়নি।

বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গতকাল জানিয়েছেন, দিনে ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সক্ষমতা রয়েছে সংস্থাটির। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও অভিযানকালে থাকছেন বিআরটিএর কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বাবুবাজার সেতু, কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমণিণ্ড, মোহাম্মদপুর, বছিলা, আঁটিবাজারসহ আশপাশে, মতিঝিল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, সাইনবোর্ড, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। অভিযান চালানো হয় ৩০০ ফুট সড়ক, পূর্বাচল, রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতু ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশবিশেষে। অভিযান চালানো হয় শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালী, কাকলী, বিমানবন্দর, উত্তরা ও এর আশপাশে, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে।

বিআরটিএ প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের প্রথম দিনের অভিযানে গতকাল ২০৫টি মামলায় পাঁচ লাখ ৬১ট্টি হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া আটটি গাড়িকে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়।