
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চালানো হচ্ছে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে একদিকে যেমন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি স্কুল পরিচালনায় দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা।
উপজেলার ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ স্কুলেই নেই প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবসর, মৃত্যু কিংবা বদলির পর এসব পদ শূন্য হলেও দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

ইছাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম সাকারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। স্থানীয় অভিভাবক মোঃ এয়াছিন জানান, “স্কুলটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষকও নেই। পাশের বিদ্যালয় থেকে গিয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন ক্লাস করান কয়েকজন শিক্ষক। এভাবে গেস্ট টিচার দিয়ে শিক্ষার মান রক্ষা করা কঠিন।”
শুধু প্রধান শিক্ষক সংকট নয়, সহকারী শিক্ষকের ৮৪টি পদও শূন্য রয়েছে। ফলে একাধিক বিদ্যালয়ে মাত্র দুই-তিনজন শিক্ষক দিয়ে পুরো স্কুল চালাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিক্ষার্থীরা। পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

মীরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিদ্যালয়গুলোকে ৯টি ক্লাস্টারে ভাগ করে পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এই ৯ ক্লাস্টারের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন মাত্র তিনজন। শূন্য পদ রয়েছে ৬জন। ফলে তদারকি কার্যক্রমও হচ্ছে খন্ডিতভাবে।
মীরসরাইয়ের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, “জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। তবে নিয়মিত নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে। আমরা চাই দ্রুত নিয়োগ দিয়ে সংকট নিরসন হোক।”
তিনি আরও বলেন, “সাকারিয়া বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক না থাকায় পাশের বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নিলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সর্বশেষ একবার সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত এক যুগে আর কোনো নিয়োগ না আসায় সারা দেশের মতো মীরসরাইয়েও শিক্ষায় মারাত্মক ধস নামছে।