
রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশের জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা করে না। প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে লোকালয়ের বাইরে। যাতে দুর্ঘটনার শিকার হলেও মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়।
এতে বাড়ছে নিরাপত্তাঝুঁকি। তারা বলেন, ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান ও শিডিউল উড়োজাহাজ একসঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। একই রানওয়ে ব্যবহার করে সামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনা করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও নেই বলে তারা জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিমান বিধ্বস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এসব কথা বলেন।
গতকাল দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফাইটার জেড এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। জানা যায়, উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এটি চীনের চ্যাংগাডু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের তৈরি বিমানটি ২০১৩ সালের দিকে এটি বিমানবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ কামরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ২৮ বছর ধরে আমরা দেখে আসছি একই বিমানবন্দরের রানওয়ে ব্যবহার করে সামরিক, সিভিল, কার্গো ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি বিশেষ দিনগুলোতেও এখান থেকে প্রশিক্ষণ মহড়া করা হয়ে থাকে, যা একেবারেই ঠিক নয়। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ফ্লাইটগুলো অবশ্যই ঢাকার বাইরে নির্জন এলাকায় নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বিমানের অবসরপ্রাপ্ত একজন পাইলট জানান, শাহজালালে কর্মাশিয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় পূর্বপাশের রানওয়ে থেকে আর বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান চালানো হয় পশ্চিমপাশ দিয়ে। এটি নিয়ে বিভিন্ন সময় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতে অনেক সময় কমার্শিয়াল ফ্লাইটের জ্বালানি খরচ কয়েকগুণ বেশি পড়ে। দেখা যায় ১৫ মিনিট বিলম্ব হলে ইউরোপের জন্য আমাদের শ্লটগুলো শেষ হয়ে যায়। আমাদের পরবর্তী শ্লটের জন্য আবার কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া একই টাওয়ার ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
নভোএয়ারের প্রধান নির্বাহী মফিজুর রহমান আমার দেশকে বলেন, কোনো ঘনবসতি এলাকায় কখনোই বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে পারে না। ১৯৮৮ সালে এখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঢাকা থেকে সরানোর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা স্থগিত হয়ে যায়। সরকারের সক্ষমতা থাকলে অবশ্যই বিকল্প রানওয়ে করা উচিত, যাতে দুর্ঘটনায় না পড়তে হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক সিনিয়র পাইলট আমার দেশকে জানান, এভাবে মানুষের মৃত্যু খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। একই রানওয়ে ব্যবহার করে সামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনা করা বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই।