
দুপুর ১টা বেজে ১৮ মিনিট। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন কলেজের প্রাথমিক শ্রেণির ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছিল। ছুটি হবে হবে, এমন সময় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভবনে। মুহূর্তেই নিভে যায় ১৮ নিষ্পাপ শিক্ষার্থীসহ ২০ জনের জীবন প্রদীপ। এক হৃদয়বিদারক ঘটনা! স্কুল ছুটির আগেই জীবন থেকে ছুটি নিতে হলো তাদের।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধ বিমান। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকায় কুর্মিটোলা বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। বেলা ১টা ১৮ মিনিটের দিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জনান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের যে ভবনটিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সে ভবনে সেই সময়ে স্কুলের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছিল। কলেজের প্রভাষক রেজাউল করিম আমার দেশকে জানান, ছুটির আগ মুহূর্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিধ্বস্ত বিমানটি সরাসরি জুনিয়র সেকশনের ভবনে আঘাত করে।
নার্সারি, কেজি, ওয়ান, টু, থ্রি এসব ক্লাস ভবনটিতে হয়। বিমানটি আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভবন ধসে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় নিহত হয় ১৮ জন শিক্ষার্থী, স্কুলের শিক্ষক মাহেরিন চৌধুরী (৪০), প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম, শিক্ষার্থী আফনান ফাইয়াজ (১৪) ও আবদুল্লাহ সামিন (১৪)সহ ২০ জন। এ ঘটনায় ১৭১ জন আহত হয়েছেন। তাদের সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটসহ আটটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের শতাধিক অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন জানান, চিকিৎসাধীন আহতদের বেশিরভাগের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ বা গুরুতর। ২৫ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রক্ত দিতে আসা অসংখ্য লোকজনের উদ্দেশে বলেন, এ মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজন নেই। রক্তদাতাদের নাম নিবন্ধন করতে বলা হয়। যখন প্রয়োজন হবে রক্তের জন্য, যোগাযোগ করা হবে। আইএসপিআর জানায়, বিমানটি সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। এটি ছিল এফ-৭ বিজিআই মডেলের বিমান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহিম হাসান সিয়াম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাফিস ইসলাম জানান, যে ভবনটিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি ছিল কলেজের প্রজেক্ট-২ ভবন। ওই ভবনের দুই তলা মিলিয়ে ১৬টি ক্লাস রুম আছে। আর ৪টি শিক্ষকদের রুম। প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হতো ওই ভবনে। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কক্ষের সামনে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই কলেজ ক্যাম্পাসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন মা, বাবা ও স্বজনরা। অভিভাবকদের অনেকেই তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে নেওয়ার জন্য গেটে অপেক্ষা করছিলেন। দুর্ঘটনার পর হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের খুঁজছিলেন। কেউ কেউ সন্তানকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন। আবার কেউ কেউ সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে পাগলের মতো এদিক-ওদিক দৌড়াচ্ছিলেন। মাতম করছিলেনÑ ‘আমার সন্তান কোথায়?’ কেউ আবার নিকটবর্তী হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। এক হাসপাতালে না পেয়ে আরেক হাসপাতালে গিয়েছেন। মোবাইলে নিজ সন্তানের ছবি বের করে দেখাচ্ছিলেন। এই দেখুন আমার খোকা। ও কি হাসপাতালে আছে?
স্কুলের সেই মাঠ, যেখানে কচি কচি শিক্ষার্থীর হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যেত, এখন সেখানে কবরের নীরবতা। এক পলকে হারিয়ে গেল ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন আর আশা।
স্কুল ভবনে বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়। বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। ওই ভবনে আগুন লেগে যাওয়ায় প্রায় দেড় ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। পাশাপাশি রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়। পুলিশ উৎসুখ মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খায়। মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা আহতদের বাঁচাতে রক্তের জন্য প্ল্যাকার্ড তুলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের হাজার হাজার জনতা সেখানে ছুটে আসেন। অনেকেই আবার স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়।
মাইলস্টোনের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির জানায়, ছাত্ররা ক্লাস শেষ করে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। কেউ কেউ ক্যান্টিনে বা সিঁড়ি ও বারান্দায় অবস্থান করছিল। আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় বিমানটি পাঁচতলা ভবনে ধাক্কা খেয়ে দোতলা ভবনে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। তখন সবাই চিৎকার শুরু করে। অনেকেই দ্রুত বাইরে বের হয়ে যায়। অনেকের শরীরে আগুন ধরে যায়।
দশম শ্রেণির শাহরিয়ার নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দোতলা ভবনে আগুন লেগেছে। দ্রুত বের হয়ে আসি। আমাদের স্কুলটা যেন এক নিমিষেই মৃত্যুপুরী হয়ে উঠল।
ওই কলেজের শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, দুপুরে ক্লাস শেষ হলেও অনেকে প্রাইভেট কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই বিমানটি ভবনের ওপর পড়ে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে।
জহিরুল আলম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিমানটিতে মাঝ আকাশেই আগুন ধরে যায়। পরে স্কুল ভবনে এসে পড়ে যায় বিমানটি।
উত্তরার পাশের সড়কে নাসিমা নামে এক নারী শ্রমিক জানান, বিকট শব্দে ভয় পেয়ে যাই। ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়। যে যেভাবে পারছে ছোটাছুটি করছে। অনেকের শরীর পুড়ে গেছে। স্কুলের সামনে গিয়ে দেখি অধিকাংশেরই শরীর ঝলসে গেছে। কেউ কেউ খালি গায়ে রয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত আটজন চিকিৎসা নিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭০ জন। এখানে মারা গেছেন দুজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনজন। এই হাসপাতালে মারা গেছেন একজন। সিএমএইচে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ জন। এই হাসপাতালে মারা গেছেন ১২ জন। কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন আহত ভর্তি আছেন। এই হাসপাতালে মারা গেছেন দুজন। উত্তরার লুবনা হাসপাতালে ১১ জন আহত ভর্তি আছেন। এই হাসপাতালে মারা গেছেন দুজন। উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০ জন। মারা গেছেন দুজন। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ভর্তি আছেন একজন।
মাইলস্টোনের শিক্ষিকার বিভীষিকাময় বর্ণনা
ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্ণনা দেন স্কুলটির শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাশ। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়। এরপর দুই ঘণ্টা কোচিংয়ের জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিল এবং যাদের অভিভাবক তখনো নিতে আসেননি, তারা অপেক্ষা করছিল। দুপুর ১টা ১০ কি ১৫ মিনিটে একটি জেটবিমান ক্রাশ হলে দিয়াবাড়ী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে যায়। ওই বিল্ডিংয়ে বাংলা ভার্সনের ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ আর ইংরেজি ভার্সনের ক্লাস সিক্স থেকে এইটের বাচ্চাদের ক্লাস হয়। আমিও ওখানেই ক্লাস নিই। ক্লাস শেষ করে ঠিক যেখানে আগুনটা লেগেছে, ওই করিডোর পার হয়ে আমাদের টিচার্স রুমে গেছি। ততক্ষণে ওই বিল্ডিংয়ের আশি ভাগ বাচ্চা বাড়ি চলে গেছে। এবং তখন বিল্ডিংয়ে ভয়ানক শব্দ, আমি কিছু বোঝার আগেই দেখি, ছোট ছোট বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসছে। দেখলাম, তাদের সারা গায়ে আগুন। আমি কোনো রকমে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ঢালছি দু-তিনজনের গায়ে। এমন সময় একজন টিচার চিৎকার করে বলছেন, ‘পূর্ণিমা বের হোন, বের হোন।’
তিনি আরো লেখেন : ‘রুম থেকে বের হয়ে দেখি, এত আগুন এত আগুন! সমস্ত করিডোরে আগুন! আমার থেকে দুই হাত দূরে আগুনের মধ্যে আমার একজন সহকর্মী ছুটতে ছুটতে এসে আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে বলেন, ‘আমাকে বাঁচান।’ তার সারা শরীর পুড়ে গেছে। আমি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে আছি তখনো। কেউ একজন হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে ওই জায়গা থেকে সরায় এবং বিল্ডিংয়ের গ্রিল ভেঙে আমাদেরকে বের করা হয়। আমার বাচ্চাগুলোকে আমি পাঁচ মিনিট আগেও দেখে এসে পাঁচ মিনিট পরে তাদের পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে এসেছি। ভগবান এরকম দিন কেন দেখাল জানি না, কেন আমার কোনো আঁচড়ও লাগল না, আমার কেন কিছু হলো না, আমি জানি না। ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মুখ আমার চোখের সামনে ভাসছে। আমার সহকর্মীদের চেহারাগুলো চোখের সামনে ভাসছে।
পাইলটের ইজেক্ট
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের পাইলট বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই ইজেক্ট (জরুরি অবতরণ) করেন। তিনি জরুরি অবতরণ করার পর বিমানটি আছড়ে পড়ে স্কুল ভবনে। তিনি ইজেক্টের পর মাইলস্টোন কলেজ প্রাঙ্গণে পড়েননি, স্কুলের বাইরে পড়েন। এ অবস্থায় স্কুলের লোকজন তাকে পাশের একটি ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে তার সেবা-শুশ্রূষা করা হয়। পরে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) মো. ছালেহ উদ্দিন জানান, ‘আমরা বিধ্বস্ত বিমান থেকে পাইলটকে পাইনি।’
চীনের তৈরি বিমানটি ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র কারণে দুর্ঘটনায় পতিত
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল সোমবার বিমান বিধ্বস্তের পর জানিয়েছে, বিমানটির মডেল ছিল এফটি-৭ বিজিআই। এটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। সামরিক সরঞ্জাম-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট গ্লোবাল সিকিউরিটিডটকমের তথ্য অনুযায়ী, এফটি-৭ বিজিআই মডেলের বিমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। এটি স্বল্প খরচে নির্মিত, এক ইঞ্জিনচালিত এবং দুই আসনবিশিষ্ট একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। মূল সংস্করণ এফ-৭ এর জন্য পাইলটদের প্রস্তুত করতে এফটি-৭ বিজিআইয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সাত মরদেহের পরিচয় শনাক্তে লাগবে ডিএনএ পরীক্ষা
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৭ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে। এরা সবাই শিশু। গতকাল সোমবার রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতদের পরিচয় শনাক্ত না হলে ডিএনএ টেস্টের পর লাশ হস্তান্তর
রাজধানীর উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে, তাদের লাশ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে তাদের লাশ পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসাকাজ নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এ ছাড়াও রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যোগাযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরুরি ফোন নম্বর দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। নম্বরগুলো হলোÑ১. মিলিটারি রেসকিউ ব্রিগেড : ০১৭৬৯-০২৪২০২, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট : ০১৭৬৯-০১৬০১৯, সিএমএইচ ইমার্জেন্সি : ১০৭৬৯০১৩৩১১। ২. মাইলস্টোন স্কুলের অ্যাডমিন অফিসার : ০১৮১৪-৭৭৪১৩২, ভাইস প্রিন্সিপাল : ০১৭৭১-১১১৭৬৬। ৩. ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের ইমার্জেন্সি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তরায় আহতদের পরিবহনে মেট্রোরেলের বগি রিজার্ভ রাখা হয়েছে
রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে নিতে মেট্রোরেলের নারী বগির পাশের বগি রিজার্ভ রাখা হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
জানা গেছে, বিধ্বস্ত বিমানটি উদ্ধার অভিযান শেষ হয় গতকাল রাত সাড়ে ৮ টার দিকে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, তাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।
বিমানটি জনবিরল এলাকায় নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন পাইলট : আইএসপিআর
দুর্ঘটনা মোকাবিলা ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম প্রশিক্ষণ বিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়। গতকাল সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইএসপিআর জানায়, আহতদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর। বিমান বাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। সেনাপ্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনী এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।