
জেদ্দা কনস্যুলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন গত ৩০শে জুন। ওএসডি হিসেবে কাগজে-কলমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় হয়ে তিনি জনপ্রশাসনে যোগদানও করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত, নৌ বা বিমানবন্দরে তার প্রবেশের কোনো তথ্য নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট কারও কাছে সদ্য অবমুক্ত হওয়া সৌদি আরবস্থ জেদ্দা কনস্যুলেটের লেবার কাউন্সেলর (মিনিস্টার লোকাল) কাজী এমদাদুল ইসলামের বর্তমান অবস্থানের কোনো তথ্য নেই। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, তিনি সশরীরে ফেরত এসেছেন এমন রিপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও তার যোগদান গৃহীত হয়েছে। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সেলর পদও শূন্য দেখানো হয়েছে। মিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তার ছবিও।
গত ক’বছরে ব্যবহৃত ওই কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। স্মরণ করা যায়, চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে ৩৩ জন যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের প্রশাসন ক্যাডারের অফিসারকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলির আদেশ করে সরকার। ওই তালিকায় ছিলেন প্রভাবশালী যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কাজী এমদাদুল ইসলাম। ওএসডি হওয়ার কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু উল্লেখ করা না হলেও তাদের সবাই ছিলেন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকারী।
কাজী এমদাদ ২০১৮ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সিলেট জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২১ ব্যাচের চতুর ওই কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা তথা মহাজোট সরকার গঠন করলে ছাত্রলীগ নেতা এমদাদ টুঙ্গীপাড়া উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে ছিলেন দীর্ঘ সময়। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন এডিএমও ছিলেন। জানা গেছেÑ ২০১৮ সালের শুরুতে সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান ২০ ব্যাচের নুমেরী জামান। নির্বাচনে তিনি শাসক দলের নির্লজ্জ দালালী করবেন না এমনটা আঁচ করতে পেরে পদায়নের ৭ মাসের মাথায় মিস্টার জামানকে আচমকা সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তার চটজলদি বিদায়ের পর (শূন্য পদে) হাসিনা-পরিবারের একান্ত বিশ্বস্ত আমলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতা কাজী এমদাদুল ইসলামকে সিলেটে পাঠানো হয়। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মিস্টার ইসলাম এখন অনেক সম্পদের মালিক। তার সেই বিত্ত-বৈভবের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
ওএসডি হওয়ার পরও ৩ মাসের অধিক সময় সৌদি আরবে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন: এদিকে চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি ওএসডি হন ১৮’র রাতের ভোটের কারিগর খ্যাত জেলা প্রশাসকদের অন্যতম জেদ্দা মিশনের লেবার কাউন্সেলর কাজী এমদাদুল ইসলাম। তার সঙ্গে ওএসডি হওয়া ৩২ অফিসারের প্রায় সবাইকে পূর্বর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে জনপ্রশাসনে ন্যস্ত করা হয় ওই মাসেই। কিন্তু প্রভাবশালী এমদাদ ওএসডি হওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে ৩ মাস দশ দিন স্ব পদে বহাল থাকলেন। এ নিয়ে সরকারের ভেতরেই জল্পনা-কল্পনা চরমে।