Image description

প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার কারণে এবার কোনো হজযাত্রীকে এয়ারপোর্টে কাঁদতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘কোনো হজযাত্রী যেন হজে যাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়, এবার সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেয়ে, কোনো হজ এজেন্সির ওপরে একক নির্ভরতা না রেখে, মন্ত্রণালয় থেকেই সব দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৮৭ হাজার হজযাত্রীর সবাইকে সুষ্ঠুভাবে হজ করিয়ে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে সবাই পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন।


আজ রবিবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নেই। হাজীদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত। 

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার পরও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন।

তিনি হজের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরই প্রধান উপদেষ্টার একটাই নির্দেশনা ছিল, যাতে কোনো হজযাত্রী ভোগান্তি শিকার না হয়, কষ্ট না পায়। নির্দেশনামতো আমরা সেভাবেই কাজ করে গেছি এবং সফলতা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।’

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ৮ জুন হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় এবং ১০ জুন থেকে হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়।

১০ জুলাই হজের ফিরতি ফ্লাইট শেষ হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত ৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ৯ জন বাদে সব হাজি (৮৭ হাজার ১৪৫ জন ব্যবস্থাপনাসহ) দেশে ফিরেছেন।’ 
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব হাজি সৌদি আরবে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদেরও দেশে পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হচ্ছে।

বর্তমানে আরো ৫ জনকে মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রোগীদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা সাপেক্ষে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রেরিত হজ যাত্রীদের হজ প্যাকেজ অনুযায়ী প্রতিশ্রুত সব সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি হজযাত্রীদের জন্য ভাড়াকৃত হোটেলে সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একাধিক কর্মকর্তাসহ একটি টিম নিয়োজিত রেখে হাজীদের সেবা দেওয়া হয়েছে। মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিকেল সেন্টার ও জেদ্দা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ প্লাজায় হাজিদেরকে মেডিকেল সেবা দেওয়া হয়েছে। হজযাত্রীদের হজ পালন সহজ ও নিরাপদ করতে প্রতি ৪৬ জন হাজীর জন্য ১ জন হজ গাইড নিযুক্তির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মিনা ও আরাফার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে এ বছর হজযাত্রী হারানো সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এ বছর ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিল, যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। ৮২ বছর বয়স্ক একজন হজযাত্রীকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমাদের হজ মিশন এখনো তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ বছর হজযাত্রী মৃত্যুর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। মোট ৪৫ জন হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের সবারই নানা ধরনের জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জও কিছুটা কমেছে। ইতোমধ্যে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চূড়ান্ত করেছি। সরকারি মাধ্যমে প্রত্যেক হাজিকে আমরা প্যাকেজের উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত দেব। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর হাজীদের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর বাড়িতে রাখা হয়। ৪ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা, শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৩ হাজার ২৭ টাকা ফেরত পাবেন। ৫ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ১৩ হাজার ৫৭০ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজি রাখা হয়নি। ৬ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতেও শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজি রাখা হয়নি।

সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর হাজিদের ১, ২ ও ৩ নম্বর বাড়িতে রাখা হয়। ১ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ১৯ হাজার ১৯২ টাকা, শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ৫১ হাজার ৬৯২ টাকা ফেরত পাবেন। ২ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২১ হাজার ১৪২ টাকা ফেরত পাবেন এবং শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ৫৩ হাজার ৬৪২ টাকা ফেরত পাবেন। ৩ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৪ হাজার ২৬২ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজি রাখা হয়নি। সরকারি মাধ্যমের ৪ হাজার ৯৭৮ জন হাজিকে আমরা সর্বমোট ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত প্রদান করব। 

তিনি বলেন, ‘যথাদ্রুত সম্ভব এই টাকা হাজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো হবে। আমি সম্মানিত হাজিসহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে স্পষ্ট একটি বার্তা দিতে চাই। সেটা হলো, হাজীদের রিফান্ড/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান/দুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয় সব ধরনের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এরূপ টাকা পাঠাতে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে ফোন করা কিংবা তার কাছ থেকে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা বিকাশ/নগদ/রকেট-এর কোন পিন নম্বর চাওয়া হয় না। এমনটি যদি কেউ করে, তাহলে আপনারা নিশ্চিত জেনে রাখুন সে প্রতারক। এরূপ প্রতারক থেকে সাবধান থাকুন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীক প্রক্রিয়া। সৌদি সরকার ও হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশগুলোর মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদিত হয়ে থাকে। তবে নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোতে সৌদি সরকারই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। আমাদের মতো হজযাত্রী প্রেরণকারী অন্যান্য দেশগুলো সৌদি সরকারের নীতি, পলিসি ও গাইডলাইন অনুসরণ করে হজ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। ২০২৫ সালে হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুসারে আমরা সব প্রক্রিয়া সুচারুরূপে যথাসময়ে সম্পাদন করেছি। সর্বোপরি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ একটি টিম স্পিরিট নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে, এ বছর হজে যেতে না পারার বেদনায় কাউকে কাঁদতে হয়নি। কোনো হজ ফ্লাইটে বিপর্যয় হয়নি। হজযাত্রীদের মধ্যে কোনোরূপ হট্টগোল, হৈচৈ বা শোরগোল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নিবন্ধিত শতভাগ হজযাত্রী হজ পালন করতে পেরেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনা একটি মাইলফলক।’

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনার যাত্রাটি আমাদের জন্য সহজ ছিল না। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ছিল, সংকট ছিল। এছাড়া, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারও নতুন নতুন বেশ কিছু নিয়ম-কানুন বা বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এছাড়া হাবের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা সংকট ছিল। উপরন্তু, এ সরকারের সময়ে হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে এরূপ জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল। এরূপ নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সম্পন্ন করতে হয়েছে।’

আ ফ ম খালিদ হোসেন আরো বলেন, ‘এ বছর এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়েছিল। সৌদি সরকার প্রথমে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২ হাজার জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে এই কোটা ১ হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হই। তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। শেষ অবধি সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় আমরা এ সংকট উত্তরণে সমর্থ হই। আমি এ বছরও হজ শেষে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টারের সঙ্গে দেখা করে তাকে এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর ন্যূনতম কোটা ১ হাজার রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। এছাড়া, মিনা ও আরাফায় বেডের সাইজ বৃদ্ধি, টয়লেটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নিরবচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এ সময় আমার সচিব মহোদয়ও আমার সঙ্গে ছিলেন।’

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, নুসুক মাসার প্লাটফরমে বাড়িভাড়া, পরিবহন চুক্তি ও হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও আমরা যথাসময়ে সম্পন্ন করতে সক্ষম হই। এক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, হাবের নেতৃবৃন্দ ও হজ এজেন্সির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’