Image description
শুরু হচ্ছে চিরুনি অভিযান

খুন-চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় এবার দেশজুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু হচ্ছে। গতকাল রোববার এই অভিযানের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এবারের চিরুনি অভিযান অন্য অভিযানের মতো গতানুগতিক হবে না। প্রস্তুতি নিয়ে জোরালোভাবে এই অভিযান শুরু হবে। অভিযানে মূল টার্গেটে থাকবে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা। অভিযানের কৌশল জানাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আজকালের মধ্যেই সারা দেশে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ অভিযান ছাড়াও চলে আলোচিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। চলমান নিয়মিত অভিযানেও প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে। এর পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এবার চিরুনি অভিযানের ঘোষণা এলো। তবে এবারের অভিযানে চাঁদাবাজি বন্ধে কোনো দল-মত, ব্যক্তি পরিচয় বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়।

গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা হয়। ওই সভার পরই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেন।

সভা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশপ্রধান বাহারুল আলমকে নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে দ্রুতই চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার খুব দ্রুতই চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান চালাবে।

সরকার জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী যে কোনো কার্যক্রম কঠোর হাতে দমন করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার পর কালবেলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে গণমাধ্যমে এই ঘোষণা শুনলেও আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে তারা জানান।

একটি জেলার পুলিশ সুপার কালবেলাকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সব সময়েই নানা অভিযানের মধ্যে থাকে। এরপর নানা পরিস্থিতিতে এসব অভিযান জোরদার করা হয়। চিরুনি অভিযানের ঘোষণা আসার পর সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা এলে কার্যক্রম শুরু হবে।

চিরুনি অভিযানের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম গতকাল কালবেলাকে বলেন, চিরুনি অভিযানের বিষয়ে এখনো পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, এটা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ চলছে। সব পুলিশ সুপারদের সঙ্গে তিনি জুম বৈঠক করে বিস্তারিত নির্দেশনা দেবেন।

পুলিশপ্রধান বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলছে। তবে এবার চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিষয়ে অভিযান জোরদার করা হবে। তবে কোনো সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও নজর থাকবে।’

এদিকে ঘোষণা দিয়ে বিশেষ অভিযান চালানোর বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, ঘোষণা দিয়ে এমন অভিযানে অপরাধীরা পালিয়ে যেতে বা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সুযোগ পায়। অবশ্য সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা কালবেলাকে বলেন, ঘোষণা দিয়ে সাজসাজ রব করে অভিযানে সাফল্য আসে না। এসব অভিযানে সাফল্য আনতে হলে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকতে হয়। সরকারের কাছে নিশ্চয় সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। সেভাবেই তারা অভিযান করবে বলে আশা করছি। নইলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার আসামিসহ নানা ধরনের অন্তত পৌনে চার লাখ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মে মাসে সারা দেশে প্রায় ৪৪ হাজার এবং জুন মাসে সারা দেশে ৩৯ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের অনেকেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে। এজন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে। কারাগার সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কারাগারে অন্তত ৭৫ হাজার বন্দি রয়েছে।

এদিকে গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা চালানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন-পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ; অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্ত ও অগ্রগতি; সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি; রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা হয়।