
বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী মামলার জট কমানোর লক্ষ্যে বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ও প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকবেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দলগুলোর সঙ্গে চলমান দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ের ওপর একমত পোষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে এটা অন্যতম।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে বেঞ্চগুলোর কাজ করার ক্ষেত্রে ছয়টি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বিভাগীয় পর্যায়ে থাকা প্রত্যেক স্থায়ী বেঞ্চে আসন গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে বিচারপতিদের মনোনয়ন করবেন এবং তাদের বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করবেন। প্রত্যেকটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে তা বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করা হবে। তা সত্ত্বেও, হাই কোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বা অবিভাজ্যতা এমনভাবে বজায় রাখতে হবে, যেন স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশের সর্বত্র কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাই কোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা বিভাজিত না হয় এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ন না হয়। অর্থাৎ বিচারপ্রার্থী জনগণ যেন তাদের নিকটতম স্থায়ী বেঞ্চে মামলা দায়েরের সুবিধা পায়। একই সঙ্গে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেন তারা ভৌগোলিক সীমারেখার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধানে এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় সুস্পষ্ট বিধান থাকবে যে, কোনো মামলার বিষয়বস্তু, যেমন- মামলার পক্ষদের ঠিকানা/অবস্থান, সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির অবস্থান, মামলার কারণ উদ্ভূত হওয়ার স্থান, ইত্যাদি যে কোনো একটি বিষয়ের সঙ্গে কোনো স্থায়ী বেঞ্চের আওতাধীন ভৌগোলিক এলাকার সংশ্লিষ্টতা থাকলে ওই বেঞ্চ মামলাটি গ্রহণ করতে পারবে। তবে, মামলার বিষয়বস্তু বিবেচনার ক্ষেত্রে বা মামলায় আদেশ, নির্দেশ, রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ওই বেঞ্চের কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা থাকবে না, অর্থাৎ, মামলায় বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ভূখণ্ডের ওপর উক্ত বেঞ্চের পূর্ণ এখতিয়ার থাকবে। ফলে, হাই কোর্ট বিভাগের একক কাঠামো এবং রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র বজায় থাকবে। কোনো স্থায়ী বেঞ্চে কোনো কার্যধারা বিচারাধীন থাকাকালে প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কোনো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা অন্য কোনো বেঞ্চে স্থানান্তরের আদেশ দিতে পারিবেন। স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, সহায়ক জনবল এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, সবগুলো স্থায়ী বেঞ্চ একই সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন বিবেচিত হলে প্রয়োজনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদরদপ্তরগুলোতে স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা একমত হয়েছি সংবিধান অনুযায়ী, একই ধরনের কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে। তবে হাই কোর্টকে ডিসেন্ট্রালাইজ করে বিভাগীয় শহরেও স্থায়ী বেঞ্চ সম্প্রসারণ করা হবে। এখানে সবাই একমত হয়েছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, বিকেন্দ্রীকরণের আলোচনায় প্রতিটি বিভাগে হাই কোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাবে সকলে সম্মত হয়েছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টেও স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে।