
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে রাজধানীর বারিধারায় বহুতল বাড়ির একটি অ্যাপার্টমেন্ট দখল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত আবাসন ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন খানের বিরুদ্ধে। অভিযোগটি তুলেছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী জিবা আমিনা খান, যিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী।
জিবা আমিনা খানের ভাষ্য, উচ্চ আদালতের স্টেটাসকো (স্থিতাবস্থা) থাকার পরও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর মদদ নিয়ে মোকাররম হোসেন খান ২০১৮ সালে ওই বাড়ির নিচের একটি অংশ দখলে নিয়েছিলেন। এখন ষষ্ঠ তলার যে অ্যাপার্টমেন্টটিতে তিনি বসবাস করেন, সেটিও বিভিন্ন উপায়ে জবরদখলের চেষ্টা করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন জিবা আমিনা খান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ রাজি নাসিফসহ সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যৌথ মালিকানার চারটি আবাসন কম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ২০০৫ সাল থেকে প্রাক্তন স্বামী মোকাররম হোসেন খানের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন তিনি।
জিবা আমিনা খানের অভিযোগ, মোকাররম হোসেন খানের এই অন্যায্য-অবৈধ প্রক্রিয়ায় মদদ দিয়েছিলেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ অনেকে।
জিবা আমিনা খান ২০১৮ সালে ঝালকাঠি-২ আসনে আমির হোসেন আমুর বিপরীতে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় তাঁর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্ধেক শেয়ার না দেওয়ার পাশাপাশি কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পর জিবা আমিনা খান এসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা করেন। ১০ বছর ধরে এই মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। এর মধ্যে আর্ডেন্ট ক্যাপিটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে জিবা আমিনা খানের অপসারণ এবং কম্পানির শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে ২০১৯ সালে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
বারিধারার ২ ইউএন রোডের ১১ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়িটি এই আর্ডেন্ট ক্যাপিটা লিমিটেডের মালিকানাধীন, যার ৪০১ ও ৫০১ ফ্ল্যাটের অ্যাপার্টমেন্টে জিবা অমিনা খান বসবাস করে আসছিলেন।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নভেম্বরে বারিধারার ওই বাড়িতে ঢুকতে জিবা আমিনা খানকে বাধা দেন মোকাররম হোসেন। হাইকোর্টের স্টেটাসকোর আদেশ লঙ্ঘন করে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং হামলার আশঙ্কা থেকে তখন গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন জিবা আমিনা খান। প্রাথমিক তদন্তের পর গত বছর ২৪ ডিসেম্বর অভিযোগের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। প্রতিবেদনে মোকাররম হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় অভিযোগ এনে বিচারের সুপারিশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের একটি কপি কালের কণ্ঠের কাছে আছে।
জানতে চাইলে জিবা আমিনা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোকাররম হোসেন খান ২০১৮ সালে হাইকোর্টের দেওয়া স্টেটাসকোর আদেশ লঙ্ঘন করে একটি অ্যাপার্টমেন্টের নিচের অংশ জোর করে দখল করেন। এই দখল প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তখন আমি কোথাও প্রতিকার পাইনি।’
নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার দল বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য আমু-মোকাররম চক্র নানা ষড়যন্ত্র করছে। মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এই চক্রের লোকজন আমার বাড়িতে (বারিধারার বাড়ি) গত ২৭ জুন হামলা চালায়। তখন আমি আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ ডাকি। পুলিশ আসার আগে হামলাকারীরা চলে যায়। কিন্তু ওই চক্র হামলা চালানোর ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করে বিএনপির সঙ্গে জড়িয়ে আমার বিরুদ্ধেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। বিএনপি এবং আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এই চক্রটি এসব প্রচার করছে। অথচ বিগত ১০ বছর এই চক্র আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছে, এখনো করে যাচ্ছে। আমার এই বাড়িতে অনেকবার হামলা হয়েছে। আর এসব হামলা-হেনস্তায় সহায়তা দিয়েছেন আমির হোসেন আমু। এখনো উনার লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁর মুক্তি দাবিতে মিছিল-মিটিং করছে। আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার করার জন্য উঠেপড়ে লেগে আছে। আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আমি বলতে চাই, আমি কোনো অন্যায় করিনি, করবও না। আমি চাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিক।’
প্রাক্তন স্বামী মোকাররম হোসেন ও তাঁর চক্রের বিরুদ্ধে কানাডা, দুবাইয়ে অর্থপাচারেরও অভিযোগ আনেন জিবা আমিনা খান। তিনি বলেন, ‘আমার কম্পানির টাকা লুটপাট করে তারা নিয়ে গেছে এবং বহাল তবিয়তে আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর্জ খলিফায় মোকাররম হোসেনের সম্পত্তি আছে। এমনকি তার (মোকাররম হোসেনের) দুটি পাসপোর্ট থাকার প্রমাণও আমার কাছে আছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোকাররম হোসেনের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মোকাররম হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জিবা আমিনা খানের আইনজীবী সৈয়দ রাজি নাসিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার পরবর্তী শুনানিতে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের নজরে আনা হবে।’