Image description
১লা আগস্ট থেকে কার্যকর

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১ আগস্ট থেকে এ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে। তবে এ শুল্ক আরোপ ‘চূড়ান্ত নয়’ বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প, রেখেছেন আলোচনার সুযোগ। এ ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা।

সোমবার ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশিত চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানান, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা খাতভিত্তিক বিদ্যমান শুল্কের পাশাপাশি প্রযোজ্য হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, সেগুলোর ওপরও একই হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকারী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে শুল্কছাড় দেওয়া হবে এবং দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে।’

ট্রাম্প চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি ও একতরফা এবং এ শুল্ক তা সংশোধনেরই একটি পদক্ষেপ।’ তবে তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি চূড়ান্ত নয়। যদি কেউ বিকল্প প্রস্তাব দেয় এবং সেটি আমাদের ভালো লাগে, তাহলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।’

আলোচনার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ, প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে : বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ শুল্ক আরোপকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ অনুপাতহীন ও অনৈতিক। তবে আমরা বিশ্বাস করি সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আমরা ইতোমধ্যে তাদের গম, সয়াবিন, বোয়িং এয়ারক্রাফটসহ নানান পণ্য আমদানিতে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সুবিধার চুক্তি করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।’

সমাজমাধ্যমে গতকাল দেওয়া পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি শুল্কচুক্তির প্রত্যাশা করছে ঢাকা, যা উভয় দেশের জন্যই উইন-উইন সমাধান হতে পারে।’ এ নতুন শুল্কের ফলে সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে তৈরি পোশাকশিল্পে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। এতদিন গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকলেও নতুন ৩৫ শতাংশ যুক্ত হয়ে তা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

এতে বাংলাদেশি পোশাক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকই ৭৩৪ কোটি ডলারের।

বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিয়ানমার, লাওসসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারও একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের ইঙ্গিত দিলেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

ট্রাম্পের প্রশাসন এর আগেও ঘোষণা দিয়েছিল, ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ হবে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে, ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ বাস্তবতায় বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশ সময়মতো আলোচনায় ইতিবাচক প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সম্মানজনক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আলোচনার দরজা এখনো খোলা আছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ও তৎপরতা, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে সমন্বিত প্রস্তাবই হতে পারে একটি কার্যকর সমঝোতার ভিত্তি।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চলতি বছরের ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয়। এ তিন মাস ট্রাম্প মূলত দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। বাংলাদেশের তরফ থেকেও সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ৩৭ শতাংশের বদলে ট্রাম্প এবার ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়্গ নামিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর।