
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা: তৌহিদুর রহমান আউয়াল বলেছেন, সরাসরি ইনটেনশনালি কিলিং করার জন্য, এমনও হয়েছে বুলেট সরাসরি সামনে দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। মাথায় সরাসরি শুট করা হয়েছে । কিছু মানুষ শেখ হাসিনা বা ফ্যাসিবাদকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, মনুষ্যত্বহীন এত কর্মচারী রাষ্ট্রীয়, যারা শুধু রাষ্ট্রকে শেখ হাসিনাকে তোয়াজ করতো, তাদের আর কোনো কিছু ভাবার দরকার নাই। তারা শুধু নিজেদের গদি ধরে রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে তোয়াজ করতো।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
‘আপনারা যখন চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা রাষ্ট্র আপনাদের সাথে কেমন আচরণ করেছে, আপনারা তারপরে চিকিৎসা দিলেন কিভাবে’-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা: আউয়াল বলেন, ‘রাষ্ট্র খুবই বিমাতাসূলভ আচরণ করেছে। আপনি অবাক হয়ে যাবেন শুনলে, যখন কোন পেশেন্ট আসতো ডিজিএফআই, এনএসআই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলাকে সে তার ব্যক্তিগত সার্ভেই হিসেবে ইউজ করতো, সে যেভাবে বলতো তারা ওই প্রেসক্রিপশনে চলতো। এর বাইরে কোনো একজন পেশেন্ট ইনজুরড, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে হয়েছে, তখন তার প্রথমেই তাকে জাস্টিফাই করা হইতো যে, এই আন্দোলন বিএনপি করেছে বা এদের পক্ষে স্টেটমেন্ট দিলে সে চিকিৎসা পাবে, না হলে চিকিৎসা পাবে না। তাদেরকে এইভাবে মৃত্যু পথযাত্রী করা হতো।’
‘এরকম কতজন পেশেন্টকে চিকিৎসা করতে দেয়া হয় নাই বা আপনারা যারা একটু চিকিৎসা করতে চাইতেন তাদেরকে নানাভাবে হ্যারেজমেন্ট করা হতো’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল, বেসিক্যালি ১৭ জুলাই ১৮ জুলাই থেকে হ্যারেজমেন্ট শুরু হয়। আস্তে আস্তে পেশেন্ট কিন্তু আমরা রাখতে পারতেছি না, ট্রিটমেন্টে তাদেরকে হ্যারেজ করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী ছিল, তারপরে ছাত্রলীগের গুন্ডারা ছিল। তাদেরকে রাখা হতো এবং ট্রিটমেন্ট যাতে না পায় সেটা এনসিওর করতো এবং কোন কোন ডাক্তার ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে, তাদেরকে সর্ট আউট করে তাদের লিস্ট করা হয়েছিল। যদি আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদ টিকে যেত তাহলে হয়তো বা এদেরকে ফাঁসির আসামি করা হতো। বিষয়টা এইভাবে চলে গিয়েছিল ‘রাষ্ট্র বনাম ফ্যাসিবাদ’। রাষ্ট্রের সবাই ছিল এই আন্দোলনের পক্ষে, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে আর শুধু হাসিনা অর্থাৎ দোসররা ছিল এর বিরুদ্ধে। যখন আমরা পেশেন্টগুলাকে পেতাম খুবই একটা আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হইতো। একটা মানুষ জানে না তার কয়েক সেকেণ্ড পরে কি হচ্ছে! ওপর থেকে বুলেট সামনে থেকে বুলেট পেছন থেকে বুলেট। চারদিকে আর চারপাশে তো ইনফর্মার বাহিনী ছিল, তারা ইনফরমেশন দিতো। বিভিন্ন লেবাসে সেফ সাইডে থাকতে চায় তারা, হয় আওয়ামী লীগের দ্বারা সরাসরি সুবিধাভোগী বা আওয়ামী লীগের দোসর, তারা এমন একটা সেফ সাইড রাখতো যে যদি কোনো কারণে এই আন্দোলন ব্যর্থ হইতো তাইলে যাতে তারা আবার তাদের সেই মায়ের কোলে মানে ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনার কোলে উঠে যেত আবার উঠে বসতে পারে তো সেরকম এরকম কিছু একটা স্বার্থন্বেষী লোক ছিল।’
‘একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনি অসহায় হয়ে গিয়েছিলেন’-এমন প্রশ্নের জবাবে আউয়াল বলেন, ‘অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম যে আসলে আমরা কোন রাষ্ট্রে থাকি! যুদ্ধের সময় যে আহত, যুদ্ধাহত তাকে কিন্তু ট্রিটমেন্ট দিতে হয়, সে যে পক্ষেরই হোক। কিন্তু এই জায়গায় আমরা দেখলাম ইতিহাসে এই প্রথম, ফ্যাসিবাদী এবং সরাসরি কিলার। একটা রাষ্ট্রের অভিভাবক হওয়ার কথা এইরকম কিন্তু সে একবারে ভিলেন এবং নারী ফেরাউনের ভূমিকায় চলে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র তার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য।’