Image description

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগমের বাড়িতে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্য একজন আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ভাই জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১০টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার রাতে এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অন্যরা হলেন, টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান টাঙ্গাইলের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। জিয়াউর রহমান সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের ছোট ভাই।

 

এর আগে ৬ জুলাই ‘মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে অর্থ লুটের অভিযোগ, তদন্তে কমিটি’- শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচরে বসে প্রশাসন।

এদিকে অভিযানের মূলহোতা সহকারী উপপরিদর্শক শামীম আল আজাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগী নারী ও অভিযোগকারী সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগমসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সালেহা বেগম মূল অভিযুক্তকারী শামীমকে বহিষ্কারসহ লুট হওয়া টাকা ফেরতের দাবি করেছেন।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সংযুক্ত করা হলেও তিনি যোগদান করেনি। আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় যোগদান না করায় আজ মঙ্গলবার শামীম আল আজাদকে জেলা অফিসের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন কারণ দর্শনোর নোটিশ দেন।

 

সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুন সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন প্রথমে আমার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে কোনো মাদকদ্রব্য না পেয়ে তাদের গাড়ির তেল খরচের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন আমি তাদের ১০ হাজার টাকা দেই। পরবর্তী সময়ে তারা আমাকে বাকি ১০ হাজার ঢাকা মোবাইলফোনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে বলে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে তারা পুনরায় আমার ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র এলোমেলো করতে থাকেন। পরে প্রায় ৩ ঘণ্টার অধিক সময় নাটকীয়ভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখানো হয়। একপর্যায়ে তারা ঘরের আলমারির তালা খুলে সেখানে থাকা নগদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেন। আমার ছেলের ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র এলোমেলো করে ও ঘরের আলমারির ড্রয়ারে থাকা নগদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমাকে ও আমার ছেলের স্ত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ড করা হয়।’

ভুক্তভোগী সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, শামীম আল আজাদ টাকার জন্য আমাকে সব চেয়ে বেশি নির্যাতন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত আমি। আমি শামীমের কঠিন বিচার চাই। এছাড়াও আমি সামান্য বহিষ্কারে খুশি নই। আমি তাদের উপযুক্ত কঠিন বিচার চাই। একই সঙ্গে লুট হওয়া টাকা ফেরতেরও দাবি করছি।

এ ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অভিযানের নামে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।