Image description
 

কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় আরও একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নতুন ভিডিওটিতে ফজর আলী ও ধর্ষণের শিকার নারীকে নিপীড়নের চিত্র ফুটে উঠেছে। এ নিয়ে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।সোমবার (৩০জুন) সকালে ‘তোদের বাপ আইছে’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে নতুন ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

 
 

এর আগে ওই নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতন করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। সে ঘটনার রেষ না কাটতেই ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ভিডিও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইচ্ছে করেই এসব ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো- নিপীড়নকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়- বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে বেশ কয়েকজন যুবক মারধর করছেন। নারীটি অনেক আকুতি-মিনতি কান্নাকাটি করলেও যুবকরা তাকে মারতে এবং ভিডিও ধারণ করতে থাকেন।

নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে রমজান, অনিক, আরিফসহ ৭/৮ জন ধর্ষক ফজর আলীর হাত পা বেঁধে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করছে। সুমনের সহযোগী অনিক ওই নারীকে চৌকির ওপরে শুইয়ে নিজ হাতে বিবস্ত্র করছেন। এ সময় অন্য এক নারীকে তাদের রক্ষা করার জন্য চিৎকার করতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ এ ঘটনাটি ভিডিও করছেন।  

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনাটিকে পরকীয় বললে ভুক্তভোগী ওই নারী তা অস্বীকার করে বলেন, 'ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেলাম তা নিয়ে কথাবার্তা হত। ওই রাতে ফজর আলী খারাপ উদ্দেশ্যেই আমার কাছে এসেছে। তবে তার ছোট ভাই শাহ পরান তার পিছনে আগে থেকেই লোক লাগাই রাখছে। ফজর আলী আমার ঘরে আসার পরপরই ১০/১২ জন লোক এসে আমাদের দুজনকে নির্যাতন করতে থাকেন।'  

রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, 'ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে ফজর আলীর আর্থিক লেনদেন রয়েছে। সেই সুবাদে ওই নারীর বাড়িতে ফজর আলী প্রায়ই আসা-যাওয়া করত। এটিও এলাকার লোকজন জানে। তবে ঘটনার বড় করার পিছনের কারিগর হচ্ছে ছাত্রলীগ সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমন। তারা আগে থেকে ফজর আলীকে টার্গেট করে দুজনকে এক সঙ্গে ধরে পরিকল্পিতভাবে বিবস্ত্র এবং নির্যাতন করে এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ওই চক্রটি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকতে পারে।'

বাহেরচর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, 'ফজর আলী একটা খারাপ লোক। সে বিভিন্ন মানুষের কাছে সুদে টাকা লাগাত। এলাকায় সে আরও নানা অপকর্মে জড়িত। সে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি তুলে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতো।'

এদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে পুলিশ বলে, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী এবং ভিডিওচিত্র ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও আমরা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই অনেকেই বিষয়টি পরকীয়া বলে প্রচার করছেন। তবে আমাদের প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বুঝেছি, তিনি সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সেটিও আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছি। শুনানি শেষে তাদেরকে রিমান্ডে পেলে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারব।

অপরদিকে মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।