Image description
শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা বাতিল হচ্ছে । করের আওতায় আসছে আইটি ব্যবসার আয় । শুল্ক স্তরে পরিবর্তন আসছে, মার্কিন পারস্পরিক শুল্কের চাপ সামলাতে ১৩৫ পণ্যের শুল্ক কমছে ।

মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাই আন্দোলনে আহত সরকারি গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধাদেরও আয়করে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে আসছে বাজেটে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ৩১টি শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহার এবং আইটি ব্যবসার আয়কে করের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের পাশাপাশি মার্কিন পারস্পরিক শুল্কের চাপ সামলাতে ১৩৫ পণ্যের শুল্ক কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সাধারণ ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আসছে বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জুলাইযোদ্ধাদের আয়কর সীমায় এই ছাড় দিতে যাচ্ছে এনবিআর। ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের আয়ের জন্য এই সীমা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর নতুন সীমা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত এক হাজার ৪০১ জনকে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাইযোদ্ধাদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে উন্নত চিকিৎসা ও জীবনযাপনে কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন তা গেজেটে উল্লেখ করা হয়। যারা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন, এ রকম ১০ হাজার ৬৪৮ জনকে আরেকটি ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তবে তাদের তালিকা এখনো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে আইএমএফের পরামর্শে শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে ৩১টি শিল্প খাত ১০ বছরের জন্য অঞ্চলভেদে ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে। শিল্পখাতগুলো হচ্ছে-একটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট এবং রেডিও ফার্মাসিউটিক্যালস; কৃষি যন্ত্রপাতি; ব্যারিয়ার কন্ট্রাসেপটিভ ও রাবার ল্যাটেক্স; ইলেকট্রনিক্সের মৌলিক উপাদান (রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিটর, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট ও মাল্টিলেয়ার পিভিসি); বাই-সাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ; বায়ো ফার্টিলাইজার; বায়োটেকনলজি ভিত্তিক কৃষিপণ্য; বয়লারের খুচরা যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম; কম্পিউটার হার্ডওয়্যার; আসবাবপত্র; হোম অ্যাপ্লায়েন্স (ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার ফিল্টার); কীটনাশক ও বালাইনাশক; চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য; এলইডি টিভি; ফলমূল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ; মোবাইল ফোন; পেট্রোকেমিক্যাল; ফার্মাসিউটিক্যালস; প্লাস্টিক রিসাইক্লিং; টেক্সটাইল মেশিনারি; টিস্যু গ্রাফটিং; খেলনা উৎপাদন; টায়ার ম্যানুফেকচারিং; ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার; ম্যান মেইড ফাইবার উৎপাদন; অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং; রোবোটিক্স ডিজাইন; এআই ভিত্তিক সিস্টেম ডিজাইন এবং ম্যানুফেকচারিং, ন্যানোটেকনোলজিভিত্তিক পণ্য ম্যানুফেকচারিং এবং এয়ারক্রাফট হেভি মেইনটেন্যান্স সার্ভিস ও খুচরা যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং।

এছাড়া আইটি ব্যবসা হতে উদ্ভূত আয়কে করের আওতায় আনা হচ্ছে বাজেটে। বিধায় সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, এনিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং, ডাটা এনালিটিক্স, গ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস, সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন ও ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং আয়ের ওপর আয়কর দিতে হবে। আগে এসব আইটি খাতের আয় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয় থেকে বাদ দিয়ে কর গণনা করা হতো।

আসছে বাজেটে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি উচ্চবিত্তের ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এ জন্য করের স্লাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান কর কাঠামোয় একজন উচ্চবিত্তের আয় বছরে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিক্রম করলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে এটি কমিয়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এতে উচ্চবিত্তের বাড়তি কর দিতে হবে।

শুল্ক স্তরে পরিবর্তন আসছে : চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬ স্তরের (০%, ১%, ৫%, ১০%, ১৫%, ২৫%) শুল্ক কাঠামো বিদ্যমান আছে। আগামী বাজেটে একটি স্তর বাড়িয়ে ৭টি স্তর (০%, ১%, ৩%, ৫%, ১০%, ১৫%, ২৫%) করা হচ্ছে। মূলত দেশে উৎপাদিত হয় না, এমন মধ্যবর্তী এবং শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের শুল্ক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, তুলাসহ শিল্পের কাঁচামালের শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে সম্পূরক শুল্ক স্তর ১২টি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও মার্কিন প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্কের চাপ সামলাতে ১৩৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক এবং ৩ শতাধিক পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানিকারকদের স্বস্তি দিতে বাজেটে ভুল এইচএস কোড ঘোষণা বা মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা কমানো হচ্ছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কখনো ভুলবশত বা অজ্ঞতাবশত এইচএস কোড ভুলের কারণে মিথ্যা ঘোষণা হয়। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা এইচএস কোডের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী মহল থেকে অভিযোগ করায় আগামী বাজেটে এটি মিথ্যা ঘোষণার সমপরিমাণ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। বর্তমানে মিথ্যা ঘোষণার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে।