
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ( সওজ ) ছয়টি জোনে ১৫ হাজার ৪৩৭ টি সেতু এবং কালভার্ট আছে । এর মধ্যে ৩ হাজার ১১৩ টি সেতু এবং ১২ হাজার ৩২৪ টি কালভার্ট । এসব সেতু এবং কালভার্টের মধ্যে ৭১২ টিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে । সেগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন । গতকাল সোমবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বুয়েট ) কাউন্সিল ভবনে এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরেছে সওজের সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ । সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প - ২- এর উদ্যোগে ‘ বাংলাদেশের সেতুর নিরাপত্তা , স্থায়িত্ব এবং ঝুঁকি কমানো ’
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ দিয়ে চলছে যানবাহন । গতকাল তোলা । ছবি : আজকের পত্রিকা
বিষয়ক ওই সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বুয়েট - জিডপাস । সেমিনারে সওজের সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয় , কুমিল্লা , রংপুর , বরিশাল , খুলনা , চিটাগাং এবং সিলেট — এ ছয়টি জোনে মোট ১৫ হাজার ৪৩৭ টি সেতু এবং কালভার্ট মনিটরিং করে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে
সেতুর অবস্থা । ক্যাটাগরি ‘ এ ’ - তে পড়েছে ১৩ হাজার ৪০৬ টি সেতু এবং কালভার্ট , এগুলোর অবস্থা ভালো । ক্যাটাগরি ‘ বি ’ - তে আছে ১২৭৭ টি , যেগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো । ক্যাটাগরি ‘ সি’- তে রয়েছে ৪২ টি , এগুলোর মেরামত প্রয়োজন । ক্যাটাগরি ‘ ডি ’ - তে ৭১২ টি যেগুলো অতি দ্রুত মেরামত করতে হবে । ক্যাটাগরি ‘ বি থেকে ডি ' পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মেরামত করতে হবে ।
এসব সেতুর ইন্সপেকশন ২০২২ সাল থেকে শুরু করেছে সওজ । আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত তারা ইন্সপেকশন করবে । ছয়টি জোনে হয়েছে , আরও চারটিতে ইন্সপেকশন চলবে । সওজের এই উপস্থাপনার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( সেতু রক্ষণাবেক্ষণ উইং ) শিশির কান্তি রাউৎ বলে, আমাদের যতস্ট্রাকচার আছে , হিসাব করলে প্রতি কিলোমিটারে একটা করে স্ট্রাকচার পড়ে । ফলে কোনো একটা সড়কে সেতু ড্যামেজ হলে পুরা সড়কের যোগাযোগব্যবস্থায় সমস্যা হয়ে যায় ।
সেতু নির্মাণ হয় ; কিন্তু নির্মাণ - পরবর্তী সময়ে মেরামত করা হয় না । নিয়মিত মেরামত করলে সেতুর সেফটি বাড়ে । তবে আমরা সেতুর আধুনিক মনিটরিং সিস্টেম নিয়েও কাজ করছি । ' বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সেতুর নানা বিষয়ে তুলনা করে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন অধ্যাপক ড . নূর ইয়াজদানি । সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন , “ আমাদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় নেই । ভালো কাজ করতে হলে সকলের সাথে সকলের সমন্বয় দরকার । '
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ( বুয়েট ) উপাচার্য অধ্যাপক ড . এ বি এম বদরুজ্জামান বলেন , বুয়েটের রোবটিক নানা ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের , যা দিয়ে সেতুর মনিটরিংয়ে অনেক কাজে লাগানো যায় । সে ক্ষেত্রে বুয়েট এবং সওজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে । সেমিনারে আলোচকেরা বলেন , সেতুর ডিজাইন যতটা না ইঞ্জিনিয়ারিংভাবে হয় , তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাবে হয় । ফলে চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না । এ ছাড়াও আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার কথা বলা হয় ।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বুয়েট ) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড . শামসুল হক বলেন , সেতু বানানোর জন্য আলাদা সেতু মন্ত্রণালয় করতে হয় , যেটা আমাদের দেশে ছাড়া আর কোথাও নজির নেই । প্ল্যানিং কমিশন যথাযথ প্ল্যান করতে পারে না । ফলে ভুল প্ল্যানিং করলে ভুল জিনিস তৈরি হবে । মেট্রোরেলের সমালোচনা করে সামসুল হক বলেন , মেট্রোরেলে ক্যাটেনারি সিস্টেম না দেওয়ার জন্য ২০১০ সাল থেকে বলে আসছি , কিন্তু সেটাই করা হয়েছে । গাছের পাতা পড়ে , ঘুড়ি পড়ে , ডাল পড়ে মেট্রো বন্ধ হয়ে যায় । শহরের মধ্যে একটা জঞ্জাল বানানো হয়েছে । মেট্রোর হেড রুমেও জটিলতা আছে । টিকেটিংয়ের পুরনো একটা সিস্টেম আমাদের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । ফলে মেট্রো এখন জাপানি খপ্পরে পড়েছে । মেট্রো হওয়ার পর কোনো ইভাল্যুয়েশন হয়নি । সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প - ২ - এর প্রকল্প পরিচালক ড . মো . ওয়ালিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন ।