Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন থেকে ১৬ জন পদত্যাগ করেছেন। অপরদিকে পদত্যাগকারীদের অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা কমিটি। রোববার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মাহতাব আবির ও সিয়াম আহসান আয়ান।

তারা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রংপুর ঘাঘট নদের পাড়ে গ্রামীণ কুটির ও শিল্পমেলায় জুয়ার আসর বসে। সেখানে জেলা ও মহানগর কমিটি মিলে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেয়। এ ঘটনায় কমিটির সদস্যরা মহানগর ও জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা সদস্যদের কোনো জবাব দেয়নি। ফেনীর বন্যার সময় ত্রাণের অবশিষ্ট ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ, রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৫ কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যসহ মামলা বাণিজ্যেরও অভিযোগ তোলা হয়। রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং এসবের পক্ষে পাওয়া প্রমাণ জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি উল্লেখ করেন তারা। তারা আরও জানান, গুটিকয়েক নেতার দায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া সংগঠক ও সদস্যদের উপর বর্তাচ্ছে। যা লজ্জাজনক ও অপমানজনক হওয়ায় জেলা ও মহানগর কমিটির সংগঠক ও সদস্যরা পদত্যাগ করেন। 

জেলা কমিটির ৫ পদত্যাগকারী হলেন- সদস্য মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, সৃজন সাহ, জুনাইদ ইসলাম, মাহতাব হোসেন আবির, সাওম মাহমুদ সিরাজ। অপরদিকে মহানগর কমিটির ১১ পদত্যাগকারীর মধ্যে রয়েছেন- মহানগর কমিটির মধ্যে যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, গোলাম আযম রাতুল, মাহদী হাসান অনিক, এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি আপন, আল শামস সিয়াম, সীমান্ত হোসেন, আল আমিন, মোজাহিদ ও আল তানজীল আহসান। শীর্ষ নেতাদের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংগঠক ও সদস্যরা পদত্যাগ করার বিষয়টি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রকাশ পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার বিকালে নগরীর মুন্সিপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নেতৃবৃন্দরা তাদের প্রতি আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জেলা কমিটির মুখপাত্র ইয়াসির আরাফাত বলেন, সংগঠন নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে যেসব কথাবার্তা হচ্ছিল। তা জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান লিয়ন বাইরে স্ক্রিনশর্ট পাঠাতো। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সংগঠনের এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে লিয়ন সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তুলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। গ্রামীণ ও কুটির শিল্পমেলায় লটারি ও হাউজিকে প্রশ্রয় দিয়ে মোটা অংকের বাণিজ্যের বিষয়ে জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. আসফাক আহমেদ জামিল বলেন, মেলা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন হয়নি। এটি কেউ কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না। মেলাটি হয়েছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে, জায়গাটিও সেনাবাহিনীর। মেলা শুরু হলে হাউজি ও লটারি বন্ধে আমরা ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলি।  

সিটি করপোরেশনে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বিগত দিনে চাকরিচ্যুতরা আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের পক্ষে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে সুপারিশ করি। তিনি তদন্ত কমিটি করে তাদের পুনর্বহালের ব্যবস্থা করেন। আমরা শুধু ২৫ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের সুপারিশ করেছি। প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি চাকরিপ্রাপ্তদের পুনর্বহাল করার সুযোগ নেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিলের পরও ২৫ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালে কেন জোর সুপারিশ করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চাকরি দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার স্যার। কারণ এটি তার এখতিয়ারে রয়েছে। আমরা শুধু সুপারিশ করেছি। তবে এখানে কোনো লেনদেন হয়নি। মিঠাপুকুরে অবস্থিত পাওয়ার প্লান্টে তদবির বাণিজ্যের বিষয়ে জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, পাওয়ার প্লান্ট থেকে কিছু বাই প্রডাক্ট বের হয়। সেটি বিক্রির কিছু অংশ পাওয়ার প্লান্টে জমি দেয়া ব্যক্তিরা পান। ভুক্তভোগীরা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার পান সে বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। বন্যাদুর্গতের ত্রাণের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ইমরান আহমেদ বলেন, ফেনীর বন্যার সময় তোলা টাকা থেকে ৮৭ হাজার টাকা বেঁচে যায়। সেই সময় আমাদের কোনো কমিটি ছিল না। পরে কমিটি হলে জেলা কমিটির তহবিলে ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাকি টাকা মহানগর কমিটির তহবিলে দেয়া হয়। এই টাকা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। অনাগত দুর্যোগে আমরা সেই টাকা খরচ করবো।