
বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য ব্যাগেজ রুলে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। শুল্ক ছাড়াই বছরে একাধিকবার স্বর্ণ আনার সুযোগ থাকলেও এখন থেকে সেটি সীমিত করা হচ্ছে বছরে মাত্র একবার। একই সঙ্গে ১০ হাজার ডলারের বেশি বহন করলে তা নির্ধারিত ফরমে ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এ ছাড়া সেকেলে ও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় কয়েকটি পণ্যের আমদানির সুযোগ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বর্ণ আনায় কড়াকড়ি, বছরে একবারই সুযোগ
বর্তমান নিয়মে একজন যাত্রী বছরে যতবার খুশি ততবার শুল্ক ছাড়াই ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার বা ২০০ গ্রাম রুপার অলংকার আনতে পারেন। এ ছাড়া শুল্ক দিয়ে ১১৭ গ্রাম বা প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণের বার আনার সুযোগ রয়েছে, যার জন্য প্রতি ভরিতে দিতে হয় চার হাজার টাকা শুল্ক।
নতুন প্রস্তাবনায় এ সুযোগ সীমিত করে বছরে একবার করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, একজন যাত্রী বর্তমানে স্বর্ণালংকার ও বার মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার স্বর্ণ আনতে পারেন। এতে ডলারের বিপরীতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে এসব স্বর্ণ আবার চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়।
এনবিআর ও বাজুসের মতভেদ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আলংকারিক স্বর্ণের বিষয়ে কোনো তথ্য বা ডাটাবেইস সংরক্ষিত নেই। ফলে এ নিয়ম বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, চোরাচালান ঠেকাতে এ ধরনের কড়াকড়ি কার্যকর নয়; বরং বছরে অন্তত চারবার এ সুযোগ থাকা উচিত। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চোরাচালানের সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।’
ডলার রক্ষায় সিদ্ধান্ত?
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সরকারের এই পদক্ষেপ মূলত রিজার্ভ রক্ষা ও ডলারপ্রবাহ বাড়ানোর কৌশল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রবাসীরা স্বর্ণ না কিনে যদি নগদ ডলার দেশে পাঠান, সেটি সরকারের জন্য লাভজনক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রবাসীরা সাধারণত বছরে একবারই দেশে আসেন। তাই তাঁদের জন্য এই সীমাবদ্ধতা সমস্যা নয়; বরং বাণিজ্যিক যাত্রীদের বারবার আসা-যাওয়ার সুযোগে অনেক বেশি স্বর্ণ আসে, যা সীমিত করা উচিত।’
ছোট হয়ে আসছে ব্যাগেজ সুবিধা
বর্তমানে স্থলবন্দর দিয়ে বছরে তিনবার সর্বোচ্চ ৪০০ ডলার পর্যন্ত শুল্কমুক্ত পণ্য আনার সুযোগ থাকলেও তা কমিয়ে একবার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউ-ব্যাগেজ (যাত্রীর সঙ্গে না থাকা লাগেজ) ব্যবস্থায় ১২ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য ১০০ কেজি এবং ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৪০ কেজি পর্যন্ত পণ্য আনার সুযোগ থাকছে।
এ ছাড়া অতীতের মতো অপ্রয়োজনীয় ও পুরনো প্রযুক্তির কিছু পণ্য যেমন ক্যাসেট প্লেয়ার, ডিস্কম্যান, টাইপরাইটার, ওয়াকম্যান, ফ্যাক্স মেশিন, ১৯ ইঞ্চি এলসিডি মনিটর, পুশবাটন ফোন—এসব পণ্য আমদানির সুযোগ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
শুল্ক ছাড়া যেসব পণ্য আনা যাবে
ডেস্কটপ/ল্যাপটপ, স্ক্যানার, প্রিন্টার, ভিডিও ও ডিজিটাল ক্যামেরা, টোস্টার, ব্লেন্ডার, জুসার, প্রেসার কুকার, গ্যাস ওভে,; বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন, টেবিল বা সিলিং ফ্যান, ২৯ ইঞ্চি টিভি, এক কার্টন সিগারেট, ১৫ বর্গমিটার কার্পেট এবং বেবি ক্যারেজ, স্ট্রোলার, ক্যালকুলেটর, সাধারণ সিডি, ৪ স্পিকারের কম্পোনেন্ট।
শুল্ক দিয়ে যেসব পণ্য আনা যাবে
টিভি (৩০-৬৬ ইঞ্চির বেশি) : ১০-৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত, হোম থিয়েটার (৪ স্পিকারের বেশি) : আট হাজার টাকা, মোবাইল সেট : ৫-২৫ হাজার টাকা (দামভেদে), ফ্রিজ/ডিপ ফ্রিজ : ৪-১৫ হাজার টাকা, এসি (উইন্ডো/স্প্লিট) : ৭-২০ হাজার টাকা, ক্যামেরা (প্রফেশনাল) : ১৫ হাজার টাকা, এয়ারগান/রাইফেল : পাঁচ হাজার টাকা এবং ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ঝাড়বাতি ইত্যাদি : ২-৬ হাজার টাকা (ধরনভেদে)।