
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পার হলেও তদন্তের তেমন কোনো সুখবর নেই। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ঢাবি ভিসি’র পদত্যাগ, থানা ঘেরাও, শাহবাগ ব্লকেডসহ একের পর আন্দোলনের পর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলাটি হস্তান্তর করা হয়েছে ডিবিতে। তবে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৩জন ছাড়া আর কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। মূল হত্যাকারীসহ বাকিরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাই সাম্য হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ে আছেন সাম্যের সহপাঠী ও দলীয় সহকর্মীরা।
গত ১৩ই মে রাত ১১টার দিকে রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশে বটগাছসংলগ্ন পুরনো ফোয়ারার কাছে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্যর সঙ্গে সেই রাতে ছিলেন তার বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। আহত সাম্যকে পরে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে সাম্য হত্যার ওই রাতেই দোষীদের শাস্তি চেয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন। পরদিন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান নিরাপদ করতে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার তথ্য জানান। একই দিন নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে শেরে বাংলা নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (২৮) নামে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের প্রত্যেককে ৬ দিন করে রিমান্ডও মঞ্জুর করেন আদালত। ভিসি’র পদত্যাগসহ ঢাবি প্রশাসনের বিচার দাবি করে একের পর আন্দোলন শুরু করে ছাত্রদল। দফায় দফায় ঘেরাও করা হয় শাহবাগ থানা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা শাহবাগ মোড় ব্লকেড করে রাখা হয়। ঢাবি প্রশাসন প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে তদন্ত কার্যক্রম বেগমান করার অনুরোধ জানান। পরে শাহবাগ থানার মামলাটি হস্থান্তর করা হয় ডিবিতে। বর্তমানে সাম্য হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা রমনা বিভাগের সদস্যরা।
বিষয়টি নিয়ে ডিএমপি’র গোয়েন্দা রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস কবির মানবজমিন’কে বলেন, শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া সাম্য হত্যা মামলাটির তদন্তভার আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। আমরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তবে আগে আটক হওয়া ওই ৩জন ছাড়া মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো নিরপরাধ মানুষকে আটক করে হয়রানি কারাটা ঠিক নয়। তাই আমরা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখছি। সেই রাতে সাম্যের সঙ্গে থাকা তার দুই বন্ধু রাফি ও বায়েজিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সোহ্রাওয়ার্দীর মাদকের বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সাম্যর বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি মানবজমিন’কে বলেন, আমাদের সঙ্গে ডিবি অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে এটা সত্য। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমাদের বন্ধু হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমরা সব করতে রাজি আছি। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের মূল অপরাধীদেরকে আটক করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুক। তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।